সম্প্রদানাস্তে আনন্দস্বামী বরকস্তাকে কহিলেন যে, “তোমাদিগের বিবাহ হইল, কিন্তু তোমরা পরস্পরকে দেখিলে না। কস্তার কুমারী মাম ঘুচানই এই বিবাহের উদ্দেশু । ইহজন্মে কখন তোমাদের পরম্পরের সাক্ষাৎ হইবে কি না, বলিতে পারি না । যদি হয়, তবে কেহ কাহাকে চিনিতে পারিবে না। চিনিবার আমি একটি উপায় করিয়া দিতেছি । আমার হাতে দুইটি অঙ্গুরীয় আছে। দুইটি ঠিক এক প্রকার। অঙ্গুরীয় যে প্রস্তরে নির্ম্মিত, তাহা প্রায় পাওয়া যায় না। এবং অঙ্গুরীয়ের ভিতরের পৃষ্ঠে একটি ময়ুর অস্থিত আছে। ইহার একটি বরকে একটি কন্যাকে দিলাম। এরূপ অঙ্গুরীয় অন্য কেহ পাইবে না-বিশেষ এই ময়ুরের চিত্র অননুকরণীয়। ইহা আমার স্বহস্তখোদিত। যদি কন্যা কোন পুরুষের হস্তে এইরূপ অঙ্গুরীয় দেখেন, তবে জানিবেন যে, সেই পুরুষ র্তাহার স্বামী : যদি বর কখন কোন স্ত্রীলোকের হস্তে এইরূপ অঙ্গুরীয় দেখেন, তবে জানিবেন যে, তিনিই তাহার পত্নী। তোমরা কেহ এ অঙ্গুরীয় হারাইও না, বা কাহাকে দিও না, অম্লাভাব হইলেও বিক্রয় করিও না। কিন্তু ইহাও আজ্ঞা করিতেছি যে, অদ্য হইতে পঞ্চ বৎসর মধ্যে কদাচ এই অঙ্গুরীয় পরিও না । অদ্য আষাঢ় মাসের শুক্ল পঞ্চমী, রাত্রি একাদশ দণ্ড হইয়াছে, ইহার পর পঞ্চম আষাঢ়ের শুক্লা পঞ্চমীর একাদশ দণ্ড রাত্রি পর্য্যন্ত অঙ্গুরীয় ব্যবহার নিষেধ করিলাম। আমার নিষেধ অবহেলা করিলে গুরুতর অমঙ্গল হইবে।” এই বলিয়া আনন্দস্বামী বিদায় হইলেন। ধনদাস কন্যার চক্ষুর বন্ধন মোচন করিলেন। হিরন্ময়ী চক্ষু চাহিয়া দেখিলেন যে, গৃহমধ্যে কেবল পিতা ও পুরোহিত আছেন --তাহার স্বামী নাই। তাহার বিবাহরাত্রি একাই যাপন করিলেন। চতুর্থ পরিচ্ছেদ বিবাহন্তে ধনদাস স্ত্রী ও কস্তাকে লইয়। দেশে ফিরিয়া আসিলেন । আরও চারি বৎসর অতিবাহিত হইল। পুরন্দর ফিরিয়া আসিলেন না—হিরন্ময়ীর পক্ষে এখন ফিরিলেই কি, না ফিরিলেই কি ? পুরন্দর যে এই সাত বৎসরে ফিরিল না, ইহা ভাবিয়া হিরন্ময়ী দুঃখিত হইলেন। মনে ভাবিলেন, “তিনি যে আজিও আমায় ভুলিতে পারেন নাই বলিয়া আসিলেন না, এমত কদাচ সম্ভবে না। তিনি জীবিত আছেন কি না সংশয়। র্তাহার দেখার আমি কামন৷ 冬 *
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।