ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ পরে এক দিন অমল হাসিমুখে হিরন্ময়ীর নিকটে আসিয়া মধুর ভৎসনা করিয়া কহিল, “ই গা বাছ, তোমার কি এমনই ধর্ম্ম ?” হিরন্ময়ী কহিল, “কি করিয়াছি ?” অম। আমার কাছে এত দিন তা বলিতে নাই ? হি। কি বলি নাই ? অম। পুরন্দর শেঠির সঙ্গে তোমার এত আত্মীয়তা। হিরন্ময়ী ঈষল্লজ্জিত হইলেন, বলিলেন, “তিনি বাল্যকালে আমার প্রতিবাসী ছিলেন—তার বলিব কি ?” অম। শুধু প্রতিবাসী ? দেখ দেখি কি এনেছি! এই বলিয়া অমলা একটি কোঁটা বাহির করিল। কৌটা খুলিয়া তাহার মধ্য হইতে অপূর্ব্বদর্শন, মহাপ্রভাযুক্ত, মহামূল্য হীরার হার বাহির করিয়া হিরন্ময়ীকে দেখাইল । শ্রেষ্ঠকন্যা হীরা চিনিত—বিস্মিত হইয়া কহিল, “এ যে মহামূল্য—এ কোথায় পাইলে ?” অম। ইহা তোমাকে পুরন্দর পাঠাইয়া দিয়াছে। তুমি আমার গৃহে থাক শুনিয়া আমাকে ডাকিয়া পাঠাইয়া ইহা তোমাকে দিতে বলিয়াছে। হিরন্ময়ী ভাবিয়া দেখিল, এই হার গ্রহণ করিলে, চিরকাল জন্য দারিদ্র্য মোচন হয়। ধনদাসের আদরের কন্যা আর অন্নবস্ত্রের কষ্ট সহিতে পারিতেছিল না। অতএব হিরন্ময়ী ক্ষণেক বিমন হইল। পরে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিল, “অমলা, তুমি বণিককে কহিও যে, আমি ইহা গ্রহণ করিব না।” অমলা বিস্মিত হইল। বলিল, “সে কি ? তুমি কি পাগল, না আমার কথায় বিশ্বাস করিতেস্থ না ?” হি। আমি তোমার কথায় বিশ্বাস করিতেছি—আর পাগলও নই। আমি উহা গ্রহণ করিব না । অমল। অনেক তিরস্কার করিতে লাগিল। হিরন্ময়ী কিছুতেই গ্রহণ করিলেন না। তখন অমল হার লইয়া রাজা মদনদেবের নিকটে গেল। রাজাকে প্রণাম করিয়া হার উপহার দিল। বলিল, “এ হার আপনাকে গ্রহণ করিতে হইবে। এ হার আপনারই
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।