চতুর্থ পরিচ্ছেদ ঃ এখন যাই কোথায় ? Y} ভাঙ্গিয়া, রক্ত শুষিয়া খাইবে, ভাবিলাম, তাও সহ করিব শরীরের কষ্ট বৈ ত না। মরিতে পাইব, সেই পরম মুখ । অতএব কাল্লা বন্ধ করিয়া, একটু প্রফুল্ল হইয়া, স্থিরভাবে রহিলাম, বাঘের প্রতীক্ষা করিতে লাগিলাম। পাতার যত বার ঘস্ঘস্ শব্দ হয়, তত্ত বার মনে করি, ঐ সর্ব্বভুঃখহর প্রাণস্নিগ্ধকর বাঘ আসিতেছে। কিন্তু অনেক রাত্রি হইল, তবুও বাঘ আসিল না। হতাশ হইলাম। তখন মনে হইল—যেখানে বড় ঝোপ জঙ্গল, সেইখানে সাপ থাকিতে পারে। সাপের ঘাড়ে পা দিবার আশায় সেই জঙ্গলের ভিতর প্রবেশ করিলাম, তাহার ভিতরে কত বেড়াইলাম। হায় । মনুষ্য দেখিলে সকলেই পলায়—বনমধ্যে কত সর সরু ঝন্টু পট্ শব্দ শুনিলাম, কিন্তু সাপের ঘাড়ে ত পা পড়িল না ; আমার পায়ে অনেক কঁটি ফুটিল, অনেক বিছুটি লাগিল, কিন্তু কৈ ? সাপে ত কামড়াইল না। আবার হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসিলাম, ক্ষুধা তৃষ্ণায় ক্লান্ত হইয়াছিলাম—আর বেড়াইতে পারিলাম না। একটা পরিষ্কার স্থান দেখিয়া বসিলাম। সহসা সম্মুখে এক ভল্লুক উপস্থিত হইল—মনে করিলাম, ভালুকের হাতেই মরিব। ভালুকটাকে তাড়া করিয়া মারিতে গেলাম। কিন্তু হায়! ভালুকটা আমায় কিছু বলিল না। সে গিয়া এক বৃক্ষের উপর উঠিল। বৃক্ষের . উপর হইতে কিছু পরে ঝন্ করিয়া সহস্র মক্ষিকার শব্দ হইল। বুঝিলাম, এই বৃক্ষে মৌচাক আছে, ভালুক জানিত ; মধু লুটিবার লোভে আমাকে ত্যাগ করিল। শেষ রাত্রিতে একটু নিদ্রা আসিল—বসিয়া বসিয়া গাছে হেলান দিয়া আমি ঘুমাইয়া পড়িলাম। চতুর্থ পরিচ্ছেদ এখন যাই কোথায় ? যখন আমার ঘুম ভাঙ্গিল, তখন কাক কোকিল ডাকিতেছে—বঁাশের পাতার ভিতর দিয়া টুকরা টুকরা রৌদ্র আসিয়া পৃথিবীকে মণিমুক্তায় সাজাইয়াছে। আলোতে প্রথমেই দেখিলাম, আমার হাতে কিছু নাই, দস্থ্যর প্রকোষ্ঠালঙ্কার সকল কাড়িয়া লইয়া বিধবা সাজাইয়াছে। বঁ হাতে এক টুকরা লোহা আছে—কিন্তু দাহিন হাতে কিছু নাই। কঁাদিতে কাদিতে একটু লতা ছিড়িয়া দাহিন হাতে বাধিলাম। তার পর চারি দিকৃ চাহিয়া দেখিতে দেখিতে, দেখিতে পাইলাম যে, আমি যেখানে বসিয়া ছিলাম, তাহার নিকট অনেকগুলি গাছের ডাল কাটা ; কোন গাছ সমূলে ছিন্ন,
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।