ኃቋg ইন্দির। কেবল শিকড় পড়িয়া আছে। ভাবিলাষ এখানে কাঠুরিয়ারা আসিয়া থাকে। তবে গ্রামে যাইবার পথ আছে। দিবার আলোক দেখিয়া আবার বঁচিবার ইচ্ছা হইয়াছিল— আবার আশার উদয় হইয়াছিল ;–উনিশ বৎসর বৈ ত বয়স নয় । সন্ধান করিতে করিতে একটা অতি অস্পষ্ট পথের রেখা দেখিতে পাইলাম । তাই ধরিয়া চলিলাম । যাইতে যাইতে পথের রেখা আরও স্পষ্ট হইল। ভরসা হইল গ্রাম পাইব । - তখন আর এক বিপদ মনে হইল—গ্রামে যাওয়া হইবে না। যে ছেঁড়া মুড়া কাপড়টুকু ডাকাইভের আমাকে পরাইয়া দিয়া গিয়াছিল, তাহাতে কোন মতে কোমর হইতে আঁটু পর্য্যন্ত ঢাকা পড়ে—আমার বুকে কাপড় নাই। কেমন করিয়া লোকালয়ে কালামুখ দেখাইব ? যাওয়া হইবে না-এইখানে মরিতে হইবে। ইহাই স্থির করিলাম । কিন্তু পৃথিবীকে রবিরশ্মিপ্রভাসিত দেখিয়া, পক্ষিগণের কলকুজন শুনিয়া, লতায় লতায় পুষ্পরাশি দুলিতে দেখিয়া আবার বাচিবার ইচ্ছা প্রবল হইল। তখন গাছ হইতে কতকগুলা পাতা ছিড়িয়া ছোট দিয়া গাথিয়া, তাহ কোমরে ও গলায় ছোট দিয়া বঁধিলাম। এক রকম লজ্জা নিবারণ হইল, কিন্তু পাগলের মত দেখাইতে লাগিল। তখন সেই পথ ধরিয়া চলিলাম । যাইতে যাইতে গরুর ডাক শুনিতে পাইলাম। বুঝিলাম, &ांभ निकाँ । o কিন্তু আর ত চলিতে পারি না। কখনও চলা অভ্যাস নাই। তার পর সমস্ত রাত্রি জাগরণ, রাত্রির সেই অসহ মানসিক ও শারীরিক কষ্ট ; ক্ষুধা তৃষ্ণ । আমি অবসয় হইয় পথিপার্শ্বস্থ এক বৃক্ষতলে শুইয়া পড়িলাম। শুইবা মাত্র নিদ্রাভিভূত হইলাম। নিদ্রায় স্বপ্ন দেখিলাম যে, মেঘের উপর বসিয়া ইন্দ্রালয়ে শ্বশুরবাড়ী গিয়াছি। স্বয়ং রতিপতি যেন আমার স্বামী—রতিদেবী আমার সপত্নী—পারিজাত লইয়া তাহার সঙ্গে কোন্দল করিতেছি। এমন সময়ে কাহারও স্পর্শে ঘুম ভাঙ্গিল। দেখিলাম, এক জন যুর পুরুষ, দেখিয়া বোধ হইল, ইতর অন্ত্যজ জাতীয়, কুলী মজুরের মত, আমার হাত ধরিয়া টানিড়েছে। সৌভাগ্যক্রমে একখানা কাঠ সেখানে পড়িয়াছিল। তাহা তুলিয়া লইয়া ঘুরাইয় সেই পাপিষ্ঠের মাথায় মারিলাম। কোথায় জোর পাইলাম জানি না, সে ব্যক্তি মাথায় হাত দিয়া উৰ্দ্ধশ্বাসে পলাইল । কাঠখানা আর ফেলিলাম না ; তাহার উপর ভর করিয়া চলিলাম। অনেক পথ: হাটিয়া, এক জন বৃদ্ধ স্ত্রীলোকের সাক্ষাৎ, পাইলাম। সে একটা গাই, তাড়াইয়া লইয়৷ যাইতেছিল।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।