ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ্ধ স্ববো কৃষ্ণদাস বাবু কলিকাতায় কালীঘাটে পূজা দিতে আসিয়াছিলেন। ভবানীপুরে বাস করিলেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “তোমার খুড়ার বাড়ী কোথায় ? কলিকাতায় না ভবানীপুরে ? তাহ। আমি জানিতাম না । জিজ্ঞাসা করিলেন, “কলিকাতায় কোন জায়গায় তাহার বাসা ?” তাহা আমি কিছুই জানিতাম না—আমি জানিতাম, যেমন মহেশপুর একখানি গণ্ডগ্রাম, কলিকাতা তেমনই একখানি গগুগ্রাম মাত্র । এক জন ভদ্রলোকের নাম করিলেই লোকে বলিয়া দিবে। এখন দেখিলাম যে, কলিকাতা অনস্ত অট্টালিকার সমুদ্রবিশেষ । আমার জ্ঞাতি খুড়াকে সন্ধান করিবার কোন উপায় দেখিলাম না। কৃষ্ণদাস বাৰু আমার হইয়া অনেক সন্ধান করিলেন, কিন্তু কলিকাতায় এক জন সামান্ত গ্রাম্য লোকের ওরূপ : সন্ধান করিলে কি হইবে ? কৃষ্ণদাস বাবু কালীর পূজা দিয়া কাশী যাইবেন, কল্পনা ছিল। পূজা দেওয়া হইল, এক্ষণে সপরিবারে কাশী যাইবার উদ্যোগ করিতে লাগিলেন । আমি কঁাদিতে লাগিলাম । র্তাহার পত্নী কহিলেন, “তুমি আমার কথা শুন। এখন কাহারও বাড়ীতে দাসীপনা কর। আজ সুৰী আসিবায় কথা আছে, তাকে বলিয়া দিব, বাড়ীতে তোমায় চাকরাণী রাখিবে ।” আমি শুনিয়া আছড়াইয়া পড়িয়া উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে লাগিলাম। “শেষ কি কপালে দাসীপনা ছিল।” আমার ঠোট কাটিয়া রক্ত পড়িতেছিল। কৃষ্ণদাস বাবুর দয়া হইল সন্দেহ নাই, কিন্তু তিনি বলিলেন, “আমি কি করিব ?” সে কথা সত্য –তিনি কি করিবেন ? আমার কপাল ! আমি একটা ঘরের ভিতর গিয়া একটা কোণে পড়িয়া কাদিতে লাগিলাম। সন্ধ্যার অল্প পূর্ব্বে কৃষ্ণদাস বাবুর গিল্পী আমাকে ডাকিলেন। আমি বাহির হইয় তাহার কাছে গেলাম । তিনি বলিলেন, “এই স্থবে। এয়েছে। তুমি যদি ওদের বাড়ী ঝি থাক, তবে বলিয়া দিই।” ঝি থাকিব না, না খাইয়। মরিব, সে কথ। ত স্থির করিয়াছি –কিন্তু এখনকার সে কথা নহে—এখন একবার সুবোকে দেখিয়া লইলাম। "বে" শুনিয়। আমি ভাবিয়।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।