সপ্তম পরিচ্ছেদ ঃ কালির বোতল {4 এই বলিয়া সুভাষিণী আমার পিছু পিছু উঠিয়া আসিল । আমাকে ধরিয়া স্থাপনার শয়নগুহে লইয়া গেল । আমি বলিলাম, “আর আমায় ধরিয়া রাখিতেছ কেন ? পেটের দায়ে, কি প্রাণের দায়ে, আমি এমন সব কথা শুনিবার জন্য থাকিতে পারিব না।” স্বভাষিণী বলিল, “থাকিয় কাজ নাই। কিন্তু আমার অনুরোধে আজিকার রাত্রিট थींक ” কোথায় যাইব ? কাজেই চক্ষু মুছিয়া সে রাত্রিটা থাকিতে সম্মত হইলাম। এ কথা ও কথার পর স্বভাষিণী জিজ্ঞাসা করিল, “এখানে যদি না থাক, তবে যাবে কোথায় ?” আমি বলিলাম, “গঙ্গায়।” এবার স্বভাষিণীও একটু চক্ষু মুছিল । বলিল, “গঙ্গার যাইতে হইবে না, আমি কি করি তা একটুখানি বসিয়া দেখ । গোলযোগ উপস্থিত করিও না—আমার কথা শুনিও ।” এই বলিয়া স্বভাষিণী হারাণী বলিয়া ঝিকে ডাকিল। হারাণী মুভাষিণীর খাস ঝি। হারাণী আসিল । মোট সোটা, কালো কুচুকুচে, চাল্লিশ পার, হাসি মুখে ধরে না, সকলতাতেই হাসি। একটু তিরবিরে। সুভাষিণী বলিল, “একবার তাকে ডেকে পাঠ ” হারাণী বলিল, “এখন অসময়ে আসিবেন কি ? আমি ডাকিয় পাঠাই বা কি করিয়া ?” সুভাষিণী ভ্রভঙ্গ করিল, “যেমন করে পারিস্—ডাক গে যা।” হারাণী হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। আমি সুভাষিণীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “ডাকিতে পাঠাইলে কাকে ? তোমার স্বামীকে ?” সু। না ত কি পাড়ার মুদি মিন্ষেকে এই রাত্রে ডাকিতে পাঠাইব । আমি বলিলাম, “বলি, আমায় উঠিয়া যাইতে হইবে কি না, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম।” - মুভাষিণী বলিল, “না। এইখানে বসিয়া থাক।” স্বভাবিণীর স্বামী আসিলেন। বেশ সুন্দর পুরুষ। তিনি আসিয়াই বলিলেন, “তলব কেন ? ভার পর আমাকে দেখিয়া বলিলেন, “ইনি কে ?” স্বভাষিণী বলিল, “ওঁর জন্যই তোমাকে ডেকেছি। আমাদের রাধুনী বাড়ী যাবে, তাই ওঁকে তার জায়গার রাখিবার জঙ্ক আমি মাসীর কাছ হুইতে এনেছি। কিন্তু মা ওঁকে রাখিতে চান না ।” - -
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।