অষ্টম পরিচ্ছেদ ৪ বিৰি পাণ্ডব * দাত বাহির করিয়া অতি কৰ্কশ কণ্ঠে বামনী বলিল, “তোমারই বুঝি রূপ যৌবন থাকিবে ? মুখে পোকা পড়বে না ?” এই বলিয়া রাগের মাথায় একটা হাড়ি চড়াইতে গিয়া পাচিক দেবী ছাড়িটা ভাঙ্গিয়া ফেলিলেন। আমি বলিলাম, “দেখিলে দিদি ৷ রূপযৌবন না থাকিলে হাতের হাড়ি ফাটে।” তখন ব্রাহ্মণী ঠাকুরাণী অৰ্দ্ধনগ্নাবস্থায় বেড়ী নিয়া আমাকে তাড়া করিয়া মারিতে আসিলেন। বয়োদোষে কাণে একটু খাট, বোধ হয় আমার সকল কথা শুনিতে পান নাই। বড় কদর্য্য প্রত্যুত্তর করিলেন। আমারও রঙ্গ চড়িল । আমি বলিলাম, “দিদি, থামে। বেড়ী হাতে থাকিলেই ভাল।” এই সময়ে সুভাষিণী সেই ঘরের ভিতর প্রবেশ করিল। বামনী রাগে তাঁহাকে দেখিতে পাইল না। আমাকে আবার তাড়াইয়া আসিয়া বলিল, “হারামজাদী ! যা মুখে আসে তাই বলিবি ৷ বেড়ী আমার হাতে থাকিবে না ত কি পায়ে দেবে নাকি ? আমি পাগল |” তখন স্বভাষিণী ভ্রভঙ্গ করিয়া তাহাকে বলিল, “আমি লোক এনেছি, তুমি হারামজাদী বলবার কে ? তুমি বেরোও আমার বাড়ী থেকে।” তখন পাচিক শশব্যস্তে বেড়ী ফেলিয়া দিয়া কঁাদ কঁাদ হইয়া বলিল, “ও মা সে কি কথা গো ! আমি কখন হারামজাদী বল্লেম । এমন কথা আমি কখন মুখেও আনি নে। তোমরা আশ্চর্য্য করিলে মা ।” শুনিয়া স্বভাষিণী খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল । বামন ঠাকুরাণী তখন ডাক ছাড়িয়া কাদিতে আরম্ভ করিলেন,—বলিলেন, “আমি যদি হারামজাদী বলে থাকি, তবে আমি যেন গোল্লায় যাই—” (আমি বলিলাম, “বালাই ! যাই ।” ) “আমি যেন যমের বাড়ী যাই—” ( আমি। সে কি দিদি ; এত সকাল সকাল। ছি দিদি । আর ছুদিন থাক না।” ) “আমার যেন নরকেও ঠাই হয় না—** এবার আমি বলিলাম, ওটি যলিও না, দিদি । নরকের লোক যদি তোমার রান্না না খেলে, তবে নরক আবার কি ?” . বুড়ী কাদিয়া স্বভাষিণীর কাছে নালিশ করিল, “আমাকে যা মুখে আসিবে, তাই বলিবে, আর তুমি কিছু বলিবে না ? আনি চল্লেম গিল্পীর কাছে।”
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।