একাদশ পরিচ্ছেদ : একটা চোরা চাহনি se রামরাম বলিলেন, “তা হবে, ওঁর বাড়ী এ দেশে নয়।” o ইনি এবার যে পাইলেন, একবারে আমার মুখপানে চাহিয়া জিজ্ঞাসা করিয়া বলিলেন, “তোমাদের বাড়ী কোথায় গ৷ ” আমার প্রথম সমস্তা, কথা কই কি ন কই। স্থির করিলাম, কথা কহিব। দ্বিতীয় সমস্ত, সত্য বলিব, না মিথ্যা বলিব। স্থির করিলাম, মিথ্যা বলিব। কেন এরূপ স্থির করিলাম, তাহা যিনি স্ত্রীলোকের হৃদয়কে চাতুর্য্যপ্রিয়, বক্রপথগামী করিয়াছেন, তিনিই জানেন। আমি ভাবিলাম, আবখ্যক হয়, সত্য কথা বলা আমার হাতেই রহিল, এখন আর একটা বলিয়া দেখি। এই ভাবিয়া আমি উত্তর করিলাম, “আমাদের বাড়ী কালাদীঘি।” তিনি চমকিয়া উঠিলেন। ক্ষণেক পরে মৃত্যুস্বরে কহিলেন, “কো কালাদীঘি, ডাকাতে কালাদীঘি ?” আমি বলিলাম, “স্থা।” তিনি আর কিছু বলিলেন না। আমি মাংসপাত্র হাতে করিয়া দাড়াইয়া রহিলাম। দাড়াইয়া থাকা আমার যে অকর্ত্তব্য, তাহা আমি ভুলিয়াই গিয়াছিলাম। এই মাত্র যে আপনাকে সহস্র ধিক্কার দিয়াছিলাম, তাহা ভুলিয়া গেলাম। দেখিলাম যে, তিনি আর ভাল করিয়া আহার করিতেছেন না। তাহা দেখিয়া রামরাম দত্ত বলিলেন, "উপেন্দ্র বাবু, আহার করুন না।” ঐটি শুনিবার আমার বাকি ছিল। উপেন্দ্র বাবু! আমি নাম শুনিবার আগেই চিনিয়াছিলাম, ইনি আমার স্বামী। আমি পাকশালায় গিয়া পাত্র ফেলিয়া একবার অনেক কালের পর আহ্বাদ করিডে বসিলাম। রামরাম দত্ত বলিলেন, “কি পড়িল ?” আমি মাংসের পাত্রখানা ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়াছিলাম।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।