হারাণীর হাসিব এখন হইতে এই ইতিবৃত্তমধ্যে পাঁচ শত বার আমার স্বামার নাম করা আবশ্বক হইবে। এখন তোমরা পাঁচ জন রসিকা মেয়ে একত্র কমিটীতে বসিয়া পরামর্শ করিয়া বলিয়া দাও, আমি কোন শব্দ ব্যবহার করিয়া তাহার নাম করিব ? পাচ শত বার “স্বামী” “স্বামী” করিয়া কান জ্বালাইয়া দিব ? না জামাই বারিকের দৃষ্টান্তানুসারে, স্বামীকে “উপেন্দ্র” বলিতে আরম্ভ করিব ? না, “প্রাণনাথ” “প্রাণকান্ত” “প্রাণেশ্বর” “প্রাণপতি” এবং “প্রাণাধিকে’র ছড়াছড়ি করিব ? যিনি আমাদিগের সর্বাপেক্ষ প্রিয় সম্বোধনের পাত্র, র্যাহাকে পলকে পলকে ডাকিতে ইচ্ছা করে, তাহাকে যে কি বলিয়া ডাকিব, এমন কথা পোড়া দেশের ভাষায় নাই। আমার এক সখী, ( দাসদাসীগণের অনুকরণ করিয়া ) স্বামীকে “বাবু বলিয়া ডাকিত—কিন্তু শুধু বাবু বলিতে তাহার মিষ্ট লাগিল না—সে মনোদুঃখে স্বামীকে শেষে “বাবুরাম” বলিয়া ডাকিতে আরম্ভ করিল। . আমারও ইচ্ছ করিতেছে, আমি তাই করি । 經 মাংসপাত্র ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া, মনে মনে স্থির করিলাম, “যদি বিধাতা হারাধন মিলাইয়াছে—তবে ছাড়া হইবে না। বালিকার মত লজ্জা করিয়া সব নষ্ট না করি।” এই ভাবিয়া আমি এমত স্থানে দাড়াইলাম যে, ভোজনস্থান হইতে বহির্ব্বাটতে গমনকালে যে এদিক্ ওদিক্ চাহিতে চাহিতে যাইবে, সে দেখিতে পাইবে। আমি মনে মনে বলিলাম যে, “যদি ইনি এদিক্ ওদিক্ চাহিতে চাহিতে না যান, তবে আমি এ কুড়ি' বৎসর বয়স পর্য্যন্ত পুরুষের চরিত্র কিছুই বুঝি নাই।” আমি স্পষ্ট কথা বলি, তোমরা আমাকে মার্জন করিও—আমি মাথার কাপড় বড় খাটো করিয়া দিয়া দাড়াইয়াছিলাম। এখন লিখিতে লজ্জা করিতেছে, কিন্তু তখন আমার কি দায়, তাহা মনে করিয়া দেখ। অগ্রে অগ্রে রমণ বাবু গেলেন ; তিনি চারিদিক্ চাহিতে চাহিতে গেলেন, যেন খবর লইতেছেন, কে কোথায় আছে। আর পর রামরাম দত্ত গেলেন--তিনি কোন দিকে চাহিলেন না। তার পর আমার স্বামী গেলেন–র্তাহার চক্ষু যেন চারিদিকে কাহার অনুসন্ধান করিতেছিল। আমি তাহার নয়নপথে পড়িলাম। র্তাহার চক্ষু আমারই অমুসন্ধান করিতেছিল, তাহ বিলক্ষণ জানিতাম। তিনি আমার প্রতি চাহিবামাত্র, আমি ইচ্ছাপূর্বক—কি বলিব, বলিতে লজ্জা করিতেছে—সৰ্পের যেমন চক্রবিস্তার স্বভাবসিদ্ধ,
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৪৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।