পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ত্রয়োদশ পরিচ্ছেদ ; আমাকে একজামিন দিতে হুইল (to পরিতে বাধ্য হইলাম। তার পর আপনার অলঙ্কাররাশি আনিয়া পরাইতে জাসিল। আমি বলিলাম, “এ আমি কিছুতেই পরিব না।” তার জন্ত অনেক বিবাদ বচসা হইল—আমি কোন মতেই পরিলাম মা দেখিয়া সে বলিল, “তবে, আর এক স্কুট আনিয়া রাখিয়াছি, তাই পর।” এই বলিয়া সুভাষিণী একটা ফুলের জার্ডিনিয়র হইতে বাহির করিয়া মল্পিকা ফুলের অফুল্ল কোরকের বালা পরাইল, তাহার তাবিজ, তাহারই বাজু, গলায় তারই দোনর মালা । তার পর এক জোড়া নূতন সোনার ইয়ারিং বাহির করিয়া বলিল, “এ আমি নিজের টাকায় র-বাবুকে দিয়া কিনিয়া আনাইয়াছি—তোমাকে দিবার জন্য । তুমি যেখানে যখন থাক, এ পরিলে আমাকে তুমি মনে করিবে । কি জানি ভাই, আজ বৈ তোমার সঙ্গে যদি দেখা না হয়—ভগবান তাই করুন,—তাই তোমাকে আজ এ ইয়ারিং পরাইব । এতে আর না বলিও না।” - বলিতে বলিতে সুভাষিণী কঁাদিল । আমারও চক্ষে জল আসিল, আমি আর না বলিতে পারিলাম না। সুভাষিণী ইয়ারিং পরাইল । সাজসজ্জা শেষ হইলে সুভাষিণীর ছেলেকে ঝি দিয়া গেল। ছেলেটিকে কোলে লইয়। তাহার সঙ্গে গল্প করিলাম। সে একটু গল্প শুনিয়া ঘুমাইয়া পড়িল। তার পর মনে একটি দুঃখের কথা উদয় হইয়াছিল, তাও এ সুখের মাঝে সুভাষিণীকে না বলিয়া থাকিতে পারিলাম না। বলিলাম, “আমি আহলাদিত হইয়াছি, কিন্তু মনে মনে র্তাহাকে একটু নিন্দ করিতেছি । আমি চিনিয়াছি যে তিনি আমার স্বামী, এই জন্য আমি যাহা করিতেছি, তাহাতে আমার বিবেচনায়, দোষ নাই । কিন্তু তিনি যে আমাকে চিনিতে পারিয়াছেন, এমন কোন মতেই সস্তুবে না। আমি তাহাকে বয়ঃপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখিয়াছিলাম। এ জন্ত আমার প্রথমেই সন্দেহ হইয়াছিল । তিনি আমাকে একাদশ বৎসরের বালিকা দেখিয়াছিলেন মাত্র। তিনি আমাকে চিনিতে পারিয়াছেন, এমন কোন লক্ষণও দেখি নাই । অতএব তিনি আমাকে পরস্ত্রী জানিয়া যে আমার প্রণয়াশার লুব্ধ হইলেন, শুনিয়া মনে মনে বড় নিন্দ করিতেছি। কিন্তু তিনি স্বামী, আমি স্ত্রী,—র্তাহাকে মন্দ ভাৰা আমার অকর্ত্তব্য বলিয়া সে কথার আর আলোচনা করিব না । মনে মনে সঙ্কল্প করিলাম, যদি কখনও দিন পাই, তবে এ স্বভাব ত্যাগ করাইব ।” স্বভাষিণী আমার কথা শুনিয়া বলিল, “তোর মত বাদর গাছে নেই, ওঁর যে স্ত্রী নেই ।”