রয়োদশ পরিচ্ছেদ : আমাকে একজামিন দিতে হইল లి তারই অনুরূপ কথা কহিতে লাগিল। কথায় কথায় সে ভাব ভুলিয়া গেল। সখীভাবেই কথা কহিতে লাগিল। আমি যে চলিয়া যাইব, সে কথা পাড়িল । চক্ষুতে তার এক বিন্দু জল চক চক করিতে লাগিল। তখন তাহাকে প্রফুল্ল করিবার জন্য বলিলাম, “যা শিখাইলে, তা স্ত্রীলোকের অস্ত্র বটে, কিন্তু এখন উ-বাবুর উপর খাটিবে কি ?” সুভাষিণী তখন হাসিয়া বলিল, “তবে আমার ব্রহ্মাস্ত্র শিখে নে ৷” এই বলিয়, মাগী আমার গল বেড়িয়া হাত দিয়া আমার মুখখান তুলিয়া ধরিয়া, আমার মুখচুম্বন করিল। এক ফোটা চোখের জল, আমার গালে পড়িল । ঢোক গিলিয়া আমার চোখের জল চাপিয়া, আমি বলিলাম, “এ যে ভাই সঙ্কল্প না হতে দক্ষিণা দেওয়া শিখাইতেছিস্ ।” সুভাষিণী বলিল, “তোর তবে বিদ্যা হবে না। তুই কি জানিস্, একজামিন দে দেখি । এই আমি যেন উ-বাবু” এই বলিয়া সে সোফার উপর জমকাইয়া বসিয়া,— হাসি রাখিতে না পারিয়া, মুখে কাপড় গুজিতে লাগিল। হাসি থামিলে, একবার আমার মুখপানে খটু মটু করিয়া চাহিল—আবার তখনই হাসিয়া লুটাইয় পড়িল। সে হাসি । থামিলে বলিল, “একজামিন দে।” তখন যে বিদ্যার পরিচয় পাঠক পশ্চাৎ পাইবেন, সুভাষিণীকেও তাহার কিছু পরিচয় দিলাম। সুভাষিণী আমাকে সোফা হইতে ঠেলিয়া ফেলিয়া দিল—বলিল, “দূর হ পাপিষ্ঠ। তুই আস্ত কেউটে " আমি বললাম, “কেন ভাই ?” সুভাষিণী বলিল, “ও হাসি চাহনিতে পুরুষ মানুষ টিকে ? মরিয়া ভূত হয়।” আমি। তবে একজামিন পাস ? সু। খুব পাস—কমিসেরিয়েটের এক-শ উনসত্তর পুরুষেও এমন হাসি চাহনি কখন দেখে নাই। মিনসের মুণ্ডটা যদি ঘুরে যায়, ত একটু বাদামের তেল দিস। আমি। আচ্ছ। এখন সাড়া শব্দে বুঝিতে পারিতেছি বাবুদের খাওয়া হইয়া গেল। রমণ বাবুর ঘরে আসিবার সময় হইল, আমি এখন বিদায় হই । যা শিখাইয়াছিলে তার মধ্যে একটা বড় মিষ্ট লাগিয়াছিল—সেই মুখচুম্বনটি। এসে আর একবার শিখি। তখন সুভাষিণী আমার গলা ধরিল, আমি তার গলা ধরিলাম । গাঢ় আলিঙ্গনপূর্বক পরস্পরে মুখচুম্বন করিয়া, গলা ধরাধরি করিয়া, ছুই জনে অনেকক্ষণ কাদিলাম। এমন ভালবাসা কি আর হয় ? স্বভাষিণীর মত আর কি কেহ ভালবাসিতে জানে ? মরিব, কিন্তু সুভাষিণীকে ভুলিব না।
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।