পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষোড়শ পরিচ্ছেদ : খুন করিয়া কঁাসি গেলাম &S ফুৎকার দিলাম—কি প্রকারে স্বামীর হৃদয় দগ্ধ করিলাম, লজ্জায় তাহার কিছুই বলিতে পারি না । যদি আমার কোন পাঠিকা নরহত্যার ব্রত গ্রহণ করিয়া থাকেন, এবং সফল হইয়া থাকেন, তবে তিনিই বুঝিবেন। যদি কোন পাঠক কখন এইরূপ নরঘাতিনীর হস্তে পড়িয়া থাকেন, তিনিই বুঝিবেন । বলিতে কি, স্ত্রীলোকই পৃথিবীর কণ্টক। আমাদের জাতি হইতে পৃথিবীর যত অনিষ্ট ঘটে, পুরুষ হইতে তত ঘটে না । সৌভাগ্য এই যে, এই নরঘাতিনী বিদ্যা সকল স্ত্রীলোকে জানে না, তাহা হইলে এত দিনে পৃথিবী নির্মহন্ত হইত। এই অষ্টাহ আমি সর্ব্বদা স্বামীর কাছে কাছে থাকিতাম—আদর করিয়া কথা কহিতাম—নীরস কথা একটি কহিতাম না। হাসি, চাহনি, অঙ্গভঙ্গী,—সে সকল ত ইতর স্ত্রীলোকের অস্ত্র । আমি প্রথম দিনে আদর করিয়া কথা কহিলাম—দ্বিতীয় দিনে অনুরাগ লক্ষণ দেখাইলাম--তৃতীয় দিনে তাহার ঘরকরনার কাজ করিতে আরম্ভ করিলাম ; যাহাতে র্তাহার আহারের পারিপাট্য, শয়নের পারিপাট্য, স্নানের পারিপাট্য হয়, সর্ব্বাংশে যাহাতে ভাল থাকেন, তাহাই করিতে আরম্ভ করিলাম—স্বহস্তে পাক করিতাম ; খড়িকাটি পর্য্যস্ত স্বয়ং প্রস্তুত করিয়া রাখিতাম। র্তার এতটুকু অমুখ দেখিলে সমস্ত রাত্রি জাগিয়া সেবা করিতাম । এখন যুক্তকরে আপনাদের নিকট নিবেদন যে, আপনার না মনে করেন যে, এ সকলই কৃত্রিম । ইন্দিরার মনে এতটুকু গর্ব্ব আছে যে, কেবল ভরণপোষণের লোভে, অথবা স্বামীর ধনে ধনেশ্বরী হইব, এই লোভে, সে এই সকল করিতে পারে না। স্বামী পাইব এই লোভে, কৃত্রিম প্রণয় প্রকাশ করিতে পারিতাম না ; ইন্দ্রের ইন্দ্রাণী হইব, এমন লোভেও পারিতাম না। স্বামীকে মোহিত করিব বলিয়া হাসি চাহনির ঘটা ঘটাইতে পারি, কিন্তু স্বামীকে মোহিত করিব বলিয়া কৃত্রিম ভালবাসা ছড়াইতে পারি না। ভগবান । সে মাটিতে ইন্দিরাকে গড়েন নাই। যে অভাগী এ কথাটা না বুঝিতে পারিবে,—যে নারকিণী আমায় বলিবে, “হাসি চাহনির ফাদ পাতিতে পার, খোপ খুলিয়া আবার বাৰিতে পার, কথার ছলে সুগন্ধি কুঞ্চিতালকগুলি হতভাগ্য মিনসের গালে ঠেকাইয়া তাকে রোমাঞ্চিত করিতে পার—আর পার না তার পাখানি তুলিয়া লইয়া টিপিয়া দিতে, কিম্ব। হকার ছিলিমটায় ফু দিতে” —যে হতভাগী আমাকে এমন কথা বলিবে, সে পোড়ারমুখী আমার এই জীবনবৃত্তাস্ত যেন পড়ে না। - ত, তোমরা পাচ রকমের পাচ জন মেয়ে আছ, পুরুষ পাঠকদিগের কথা আমি ধরি ন—তাহারা এ শাস্ত্রের কথা কি বুঝিবে—তোমাদের আসল কথাটা বুঝাইয়া বলি। ইনি