পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অষ্টাদশ পরিচ্ছেদ : ভারি জুয়াচুরির বন্দোবস্ত 9%ו আমি। বলিবে যে, এই ইন্দিরী—রামরাম দত্তের বাড়ীতে খুজিয়া পাইয়াছি। তিনি। আ সর্ব্বনাশ ! তুমি কে ? স্বামী মহাশয়, নিম্পদ হইয়া, দুই চক্ষের তার উপর দিকে তুলিয়, আমার মুখপানে চাহিয়া রহিলেন। আমি জিজ্ঞাসা করিলাম, “কেন কি হইয়াছে ?” তিনি। ইন্দির নাম জানিলে কি প্রকারে ? আর আমার মনের গুপ্ত অভিপ্রায় বা জানিলে কি প্রকারে ? তুমি মানুষ, না কোন মায়াবিনী ? আমি । সে পরিচয় পশ্চাৎ দিব। এখন আমি তোমাকে পালট জেরা করিব, স্বরূপ উত্তর দাও । তিনি। (সভয়ে ) বল । আমি । সে দিন তুমি আমাকে বলিয়াছিলে যে, তোমার স্ত্রীকে পাওয়া গেলেও তুমি গ্রহণ করিবে না ; কেন না, তাহাকে ডাকাতে কাড়িয়া লইয়া গিয়াছে ; তোমার জাতি যাইবে । আমাকে ইন্দিরা বলিয়া ঘরে লইয়া গেলে সে ভয় নাই কেন ? তিনি। সে ভয় নাই ? খুবই আছে। তবে তাহাতে আমার প্রাণের দায় ছিল না—এখন আমার প্রাণ যায়—জাতি বড়, না প্রাণ বড় ? আর সেটাও তেমন বিষম সঙ্কট নয় । ইন্দিরা যে জাতিভ্রষ্ট হইয়াছিল, এমন কথা কেহ বলে না। কালাদীঘিতে যাহারা ডাকাতি করিয়াছিল, তাহারা ধরা পড়িয়াছে । তাহারা একরার করিয়াছে । একরারে বলিয়াছে, ইন্দিরার গহনাগাটি মাত্র কাড়িয়া লইয়া তাহাকে ছাড়িয়া দিয়াছে। কেবল এখন সে কোথায় আছে, কি ইঈয়াছে, তাই কেহ জানে না ; পাওয়া গেলে একটা কলঙ্কশূন্ত বৃত্তান্ত অনায়াসেই তৈয়ার করিয়া বলা যাইতে পারে। ভরসা করি, রমণ বাৰু যাহা লিখিয়া দিবেন, তাহাতে তাহার পোষকতা করিবে। তাতেও যদি কোন কথা উঠে, গ্রামে কিছু সামাজিক দিলেই গোল মিটিবে। আমাদের টাকা আছে—টাকায় সবাইকে বশীভূত করা যায়। আমি । যদি সে আপত্তি কাটে, তবে আর আপত্তি কি ? তিনি। গোল তোমাকে লইয়া। তুমি জাল ইন্দির, যদি ধরাপড় ? আমি । তোমাদের বাড়ীতে আমাকেও কেহ চেনে না, আসল ইন্দিরাকেও কেহ চেনে না ; কেন না, কেবল একবার বালিকাবয়সে তাহাকে তোমরা দেখিয়াছিলে, তবে ধরা পড়িব কেন ? তিনি। কথায়। নূতন লোক গিয়া জানা লোক সাজিলে সহজে কথায় ধরা পড়ে ।