উনবিংশ পরিচ্ছেদ বিদ্যাধরী দেখিলাম, এক্ষণে অনায়াসে আত্মপরিচয় দিতে পারি। আমার স্বামীর নিজ মুখ হইতে আমার পরিচয় ব্যক্ত হইয়াছে। কিন্তু কিছুমাত্র সন্দেহ থাকিতে, আমি পরিচয় দিব না, স্থির করিয়াছিলাম। তাই বলিলাম, “এখন আত্মপরিচয় দিব। কামরূপে আমার অধিষ্ঠান। আমি আছাশক্তির মহামন্দিরে তাহার পার্থে থাকি। লোকে আমাদিগকে ডাকিনী বলে, কিন্তু আমরা ডাকিনী নই। আমরা বিদ্যাধরী। আমি মহামায়ার নিকট কোন অপরাধ করিয়াছিলাম, সেই জন্য অভিসম্পাতগ্রস্ত হইয়া এই মানবীরূপ ধারণ করিয়াছি। পাচিকাবৃত্তি এবং কুলটাৰ্বত্তিও ভগবতীর শাপের ভিতর। তাই এ সকলও অদৃষ্টে ঘটিয়াছে। এক্ষণে আমার শাপ হইতে মুক্ত হইবার সময় উপস্থিত হইয়াছে। আমি জগন্মাতাকে স্তবে প্রসন্ন করিলে, তিনি আজ্ঞা করিয়াছেন যে, মহাভৈরবীদর্শন করিবামাত্র আমি মুক্তিলাভ করিব।” তিনি জিজ্ঞাস করিলেন, “সে কোথায় ?” . আমি বলিলাম, “মহাভৈরবীর মন্দির মহেশপুরে, তোমার শ্বশুরবাড়ীর উত্তরে । সে তাদেরই ঠাকুরবাড়ী, বাড়ীর গায়ে, খিড়কি দিয়া যাতায়াতের পথ আছে। চল, মহেশপুরে যাই।” তিনি ভাবিয়া বলিলেন, “তুমি বুঝি আমার ইন্দিরাই হইবে। কুমুদিনী যদি ইন্দির, তাহা হইলে কি মুখ । পৃথিবীতে তাহ হইলে আমার মত সুখী কে ?” আমি । যেই হই, মহেশপুর গেলেই সব গোল মিটিবে। তিনি। তবে চল, কাল এখান হইতে যাত্রা করি। আমি তোমাকে কালাদীঘি পার করিয়া দিয়া মহেশপুরে পাঠাইয়া দিয়া, নিজে আপাততঃ বাড়ী যাইব । দুই একদিন সেখানে থাকিয়া আমি মহেশপুর যাইব । যোড়হাতে তোমার কাছে এই ভিক্ষা করি যে, তুমি ইন্দিরাই হও, আর কুমুদিনীই হও, আর বিদ্যাধরী হও, আমাকে ত্যাগ করিও না। আমি । না। আমার শাপাস্ত হইলেও দেবীর কৃপায় আবার তোমায় পাইতে পারিব। তুমি আমার প্রাণাধিক প্রিয় বস্তু। “এ কথাটা ত ডাকিনীর মত নহে।” এই বলিয়া তিনি সদরে গেলেন। সেখানে লোক আসিয়াছিল। লোক আর কেহ নহে, রমণ বাবু। রমণ বাবু, আমার স্বামীর সঙ্গে
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৭৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।