۹۶ ইনির
কারও ঘোমটা, কারও আড়ঘোমট, কারও অধিঘোমটা,—কারও কেবল কবরীপ্রান্তে মাত্র বসনসংস্পর্শ—কারও তাতেও ভুল। আমার প্রাণনাথ অনেক গোরার পল্টন ফতে করিয়া ঘরে টাকা লইয়া আসিয়াছেন—অনেক কর্ণেল, জানরেলের বুদ্ধিভ্রংশ করিয়া, লাভের অংশ ঘরে লইয়া আসিয়াছেন–কিন্তু এই সুন্দরীর পল্টন দেখিয়া, তিনি বিশুষ্ক-বিত্রস্ত । তোপের আগুনের স্থানে নয়নবহ্নির ফুর্ত্তি-কামানের কালকরালকুগুলীকৃত ধূমপুঞ্জের পরিবর্তে এই কালকরালকুগুলীকৃত কমনীয় কেশকাদম্বিনী, বেণ্ডনেটের ঠনঠনির পরিবর্তে এই অলঙ্কারের রুশূ রুণি ; জয়ঢাকের বাদ্যের পরিবর্তে আলতা-পরা পায়ে মলের ঝম্ঝমি । যে পুরুষ চিলিয়ানওয়ালা দেখিয়াছে—সেও হতাশ্বাস। এ ঘোর রণক্ষেত্রে তাহাকে রক্ষা করিবার জন্য, তিনি আমাকে স্বারদেশে দেখিতে পাইয়া ইঙ্গিতে ডাকিলেন–কিন্তু আমিও শিখ সেনাপতির মত, বিশ্বাসঘাতকতা করিলাম—এ রণে র্তাহার সাহায্য করিলাম না । 3. স্থূল কথা, এই সকল মজলিসগুলায় অনেক নির্লজ্জ ব্যাপার ঘটিয়া থাকে জানিতাম । তাই কামিনী আর আমি গেলাম না—বাহিরে রহিলাম। দ্বার হইতে মধ্যে মধ্যে উকি মারিতে লাগিলাম। যদি বল, যাহাতে নির্লজ্জ ব্যাপার ঘটে, তুমি তাহার বর্ণনায় কেন প্রবৃত্ত, তাহাতে আমার উত্তর এই যে, আমি হিন্দুর মেয়ে, আমার রুচিতে এই সকল ব্যাপার নির্লজ্জ ব্যাপার। কিন্তু এখনকার প্রচলিত রুচি ইংরেজি রুচি ; ইংরেজি রুচির বিধানমতে বিচার করিলে ইহাতে নির্লজ্জ ব্যাপার কিছুই পাওয়া যাইবে না । বলিয়াছি, আমি ও কামিনী দুই জনে একবার একবার উকি মারিলাম। দেখি, । পাড়ার যমুনাঠাকুরাণী সভাপত্নী হইয়। জমকাইয়া বসিয়া আছেন। তার বয়স পঁয়তাল্লিশ ছাড়াইয়াছে ; রঙটা মিঠে রকম কালে ; চোক দুইটা ছোট ছোট, কিন্তু একটু ঢুলু ঢুলু, ঠোট দুইখানা পুরু, কিন্তু রসে ভরা ভর। বস্ত্রীলঙ্কারের বাহার-পায়ে আলতার বাহার, কালোতে রাঙ্গ, যেন যমুনাতেই জবা,—মাথায় ছেঁড়া চুলের বাহার। শরীরের ব্যাস ও পরিধি অসাধারণ দেখিয়া, আমার স্বামী উাহাকে "নদীরপামহিষী বলিয়া ব্যঙ্গ করিতেছেন। মথুরাবাসীরা যমুনা নদীকে কৃষ্ণের নদীরূপ মহিষী বলিয়া থাকে, সেই কথা লক্ষ্য করিয়া উ-বাবু এই রসিকতা করিলেন। এখন আমার যমুনা দিদি কখনও মথুরা যান নাই, এত খবরও জানেন না, এবং মহিষী শব্দের অর্থটা জানেন না। তিনি মহিষী অর্থে কেবল মাদি মহিষই বুঝিয়াছিলেন এবং সেই জন্তুর সহিত আপনার শরীরের সাদৃশ্ব লক্ষ্য করিয়া রাগে গর গর করিতেছিলেন। প্রতিশোধার্থ তিনি আমার স্বামীর সম্মুখে আমাকে