পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

স্বাবিংশতিতম পরিচ্ছেদ : উপসংহার br; পাচিক ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণীর সংবাদ স্বভাষিণী এইরূপ লিখিল, “যে অবধি তুমি তোমার স্বামীর সঙ্গে গোপনে চলিয়া গিয়াছ, সে অবধি বুড়ী বড় আম্ফালন করিত, বলিত, “আমি বরাবর জানি সে মানুষ ভাল নয়। তার রকম সকম ভাল নয়। কতবার বলেছি যে, এমন কুচরিত্র মানুষ তোমরা রেখ না। তা, কাঙ্গালের কথা কে গ্রাহ করে ? সবাই কুমুদিনী কুমুদিন ক’রে অজ্ঞান। এমনই এমনই আরও কথা। তার পর যখন শুনিল যে, । তুমি আর কাহারও সঙ্গে যাও নাই, আপনার স্বামীর সঙ্গে গিয়াছ, তুমি বড় মানুষের মেয়ে, বড় মানুষের বেী—এখন আপনার ঘর বর পাইয়াছ, তখন বলিল, “আমি ত বরাবর বলচি মা যে, সে বড় ঘরের মেয়ে, ছোট ঘরে কি আর আমন স্বভাব চরিত্র হয় ? যেমন রূপ, তেমনই গুণ, যেন লক্ষ্মী। সে ভাল থাকুক মা ! ভাল থাকুক। তা, হা দেখ বৌদিদি। আমাকে কিছু পাঠাইয়া দিতে বলে ।” গৃহিণী সম্বন্ধে সুভাষিণী লিখিল, “তিনি তোমার এই সকল সংবাদ পাইয়া আহলাদ প্রকাশ করিয়াছেন, কিন্তু আমাকে ও র-বাবুকে কিছু ভৎসনাও করিয়াছেন। বলিয়াছেন, ‘সে যে এত বড় ঘরের মেয়ে, তা তোরা আমাকে আগে বলিস নে কেন ? আমি তাকে খুব যত্নে রাখিতাম। আর তোমার স্বামীরও কিছু নিন্দ করিয়াছেন, বলিয়াছেন, ‘হোক্‌ ৰ্তার পরিবার, আমার অমন রাধুনীটা নিয়ে যাওয়া তার কিছু ভাল হয় নাই ।” কর্ত্তা রামরাম দত্তের কথা খোদ সুভাষিণীর নিজ হাতের হিজিবিজি। কষ্টে পড়িলাম যে, কর্ত্ত গৃহিণীকে কৃত্রিম কোপের সহিত তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিলেন, “তুমি ছল ছুতা করিয়া সুন্দর রাধুনীটাকে বিদায় করিয়া দিয়াছ।” গৃহিণী বলিলেন, “খুব করিয়াছি, তুমি সুন্দরী নিয়ে কি ধুইয়া খাইতে ?” কর্তা বলিলেন, “তা কি বলতে পারি। ও কালো রূপ আর রাত দিন ধ্যান করিতে পারা যায় না।” গৃহিণী সেই হইতে শয্যা লইলেন, আর সেদিন উঠিলেন না। কর্ত্ত যে র্তাহাকে ক্ষেপাইয়াছেন, তাহা তিনি কিছুতেই বুঝিলেন नl । বলা বাহুল্য যে, ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী ও অন্যান্য ভূত্যবর্গের জন্য কিছু কিছু পাঠাইয়া দিলাম । 锡 তার পর স্বভাষিণীর সঙ্গে আর একবার মাত্র দেখা হইয়াছিল। তার কন্যার বিবাহের সময়ে বিশেষ অনুরোধে, স্বামী মহাশয় আমাকে লইয়া গিয়াছিলেন। সুভাষিণীর কন্যাকে অলঙ্কার দিয়া সাজাইলাম—গৃহিণীকে উপযুক্ত উপহার দিলাম—যে যাহার যোগ্য, তাহাকে সেইরূপ দান ও সম্ভাষণ করিলাম। কিন্তু দেখিলাম, গৃহিণী আমার প্রতি ও আমার