পাঠভেদ ** ఫిé চতুর্থ পরিচ্ছেদ । এখন হইতে এই ইতিবৃত্ত মধ্যে এক শত বার আমার স্বামীর উল্লেখ করিবার আবখ্যক হইবে । এখন তোমরা পাচ জন রসিকা মেয়ে একত্র কমিটিতে বসিয়া পরামর্শ করিয়া বলিয়া দেও, আমি কোন শব্দ ব্যবহার করিম তাহার উল্লেখ করিব ? এক শত বার “স্বামী স্বামী” করিয়া কান জালাইয়া দিব ? না জামাই বারিকের দৃষ্টাস্তানুসারে, স্বামীকে “উপেন্দ্র" বলিতে আরম্ভ করিব ? না “প্রাণ নাথ” “প্রাণ কাভ” "প্রাণেশ্বর” “প্রাণ পতি,” এবং “প্রাণাধিকের" ছড়া ছড়ি করিব ? যিনি আমাদিগের সর্বপ্রিয় সম্বোধনের পাত্র, র্যাহাকে পলকে২ ডাকিতে ইচ্ছা করে, তাহাকে যে কি বলিয়া ডাকিব, এমন কথা পোড়া দেশের ভাষায় নাই। আমার এক সর্থী, ( সে একটু সহর ঘেঁসা মেয়ে) স্বামীকে “বাবু’ বলিয়া ডাকিত—কিন্তু শুধু বাৰু বলিতে তাহার মিষ্ট লাগিল না—সে মনোদুঃখে স্বামীকে শেষে “বাবুরাম" বলিয়৷ ডাকিতে আরম্ভ করিল। আমারও ইচ্ছা করিতেছে, আমি তাই করি । মাংসপাত্র ছুড়িয়া ফেলিয়া দিয়া, মনে২ স্থির করিলাম, “যদি বিধাতা হারাধন মিলাইয়াছে—তবে ছাড়া হইবে না। বালিকার মত লজ্জা করিয়া সব নষ্ট না করি।” এই ভাবিয়া আমি এমত স্থানে দাড়াইলাম যে, ভোজনস্থান হইতে বহির্ব্বাটীতে গমনকালে যে এদিক ওদিক চাহিতে চাহিতে যাইবে, সে দেখিতে পাইবে । আমি মনে২ বলিলাম যে, “যদি ইনি এদিক ওদিক চাহিতেই না যান, তবে আমি এ কুড়ি বৎসর বয়স পর্য্যস্ত পুরুষের চরিত্র কিছুই বুঝি নাই।" আমি স্পষ্ট কথা বলি, তোমরা আমাকে মার্জনা করিও—আমি মাথার কাপড় ফেলিয়া দিয়া দাড়াইয়ুছিলাম । এখন লিখিতে লজ্জা করিতেছে, কিন্তু তখন আমার কি দায়, তাহা মনে করিয়া দেখ। আগ্নেই রাম রাম দত্ত গেলেন—তিনি কোন দিকে চাহিলেন না। তার পর স্বামী গেলেন–র্তাহার চক্ষু যেন চারিদিগে কাহার অনুসন্ধান করিতেছিল । আমি তাহার নয়নপথে পড়িলাম। তাহার চক্ষু আমারই অনুসন্ধান করিতেছিল, তাহা বিলক্ষণ জানিতাম। তিনি আমার প্রতি চাহিবা মাত্র, আমি ইচ্ছাপূর্ব্বক,-কি বলিব, বলিতে লজ্জা করিতেছে—সপের যেমন চক্রবিস্তার স্বভাৰসিদ্ধ, কটাক্ষও আমাদিগের তাই। যাহাকে আপনার স্বামী বলিয়া জানিয়াছিলাম, তাহার উপয় একটু অধিক করিয়া বিষ ঢালিয়া না দিব কেন ? বোধ হয় “প্রাণনাথ” আহত হইয়া বাহিরে গেলেন । হারাণী নামে রামরাম দত্ত্বের একজন পরিচারিকা ছিল । আমার সঙ্গে তাহার বড় ভাব-সেও দাসী, আমিও দাসী—ন হইবে কেন ? আমি তাহাকে বললাম, “বি, আমার জন্মের শোধ একবার উপকার কর। ঐ বাবুট কখন যাইবেন, আমাকে শীঘ্র খবর আনিয়া দে।” হারাণী মৃদু হাসিল। বলিল, “ছি! দিদি ঠাকুরুন ! তোমার এ রোগ আছে, তা জানিতাম না।” আমিও হাসিলাম। বলিলাম, "মাহুষের সকল দিন সমান যায় না। এখন তুই গুরুমহাশয় গিরি রাখ—জামার এ উপকার কবি কি না কল ।” হারাণী বলিল, “তোমার জন্য একাজ আমি করিব কিন্তু আর কারও জন্য হইলে করিতাম না।”
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।