পাতা:উত্তরকালের গল্পসংগ্রহ - মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
উত্তরকালের গল্পসংগ্রহ

গুপ্তধন

বর্ষাকালে তো বটেই, বছরের অন্যসময়েও কুপী নদীর মেজাজ কুপী বরফের প্রধান গণবাচক শব্দটার ঠিক বিপরীত বিশেষণের অধিকারী। পgাশ . ষাট বছর আগে একটা শাখা নদী মজিয়া যাওয়ার পর একা একা সমস্ত জলস্রোতকে বহিতে। হওয়ায় নদরটা এরকম,গোঁয়ার হইয়া উঠিয়াছিল। হরিথালি এবং তার আশেপাশের কয়েকটা গ্রামও বড় নাঁচু। তাই, মাইল পাঁচেক লবাসহরের সদর রাতার মতো। চওড়া এবং একতল। বাড়ির সমান উ‘চু একটা বাঁধ দিয়া এখানে কুপী নদীকে ঠেকাইয়া রাখা হইয়াছে। বর্ষাকালে বাঁধের উপর দাঁড়াইয়া চারিদিকে চাহিলে বিস্ময় জাগে। এদিকে ভরানদীর ছোট-বড় চেউ বাঁধের গায়ে আছড়াইয়া পড়িতেছে, এদিকে এলোমেলোভাবে ছড়ানো পড়িয়া আাছে গ্রামের গাছপালা বাড়িঘর, মাঝখানে দঃদিকে ঘষ্টির সীমা পর্যন্ত প্রসারিত প্রকাণ্ড একটা মেটে সাপের মতো অাঁকা বাঁকানদীর বাঁধ। পণিমা অমাবস্যায় নদপতে সমস্ত্রের জোয়ার অসিবার দশ্যটি সবচেয়ে অপরপে। হাত তিনেক উচু ফেনিল জলস্রোতকে ছটিয়া আসিতে দেখিলে চোখ পলক ফেলা যায় না, প্রকৃতির প্রতি মনে সভয় শ্রদ্ধার আবির্ভাব ঘটে।

ভীমের চোখে কিন্তু দশ্যটি দেখিয়া পলক পড়িত বেশী বেশী, দচোখ তার মিটমিট করিত এবং মনে মনে সভয় গ্রধার বদলে দেখা দিত একটা হাঙ্কা ছেলে মান ষী আনন্দ।

এই রকম খাপছাড় লোক ছিল হরিখালি-বাসী ভীম।

বে'টে শীর্ণকায় অকালবদ্ধ গোবেচারী ভীমের সঙ্গে গ্রামের কারো যেন বনিবনা হইত না, সকলেই অপবিস্তর উয় করিয়া চলিত তাকে। মানুষকে ঠকাইতে সে। iছল ওস্তাদ। মানযকে ঠকানো অবশ্য তার ব্যবসা ছিল না, জীবিকা সে অজন করিত ন্যায়সঙ্গত ভদ্ৰ উপায়ে কিন্তু নিজের সম্বন্ধে মানুষের মনে অসংখ্য ভুল ধারণার জন্ম দেওয়াতাঁর কাছে কেউ কিছ, লাভের আশা করিলে তাকে হতাশ করা, কেউ.ঠকাইতে আসিলে তাকে একেবারে ঘোল খাওয়াইয়া ছাড়া প্রভৃতি কতকগণুলি ভারি বিশ্রী প্ৰভাব ভীমের ছিল। তার চেহারা দেখিয়া কে কল্পনা করিতে পারিত, লাঠিখেলার কৌশলগ’লি সে এত ভাল আয়ত্ত করিয়াছে যে মাথায় আসল লাঠিয়াসের মতো বাবরি চুল রাখিবার অধিকার তার ছিল। গরম্ভ হাগলের দধে বেচিয়া ভীম কোথায় এত টাকা পাইত যাতে গোৱালপাড়ার অনেকখানি তফাতে কিছু ফাকা জমির মধ্যে এগারটি পলাশগাছের আড়ালে সন্সের একটি গহে প্রায় ভদ্রলোকের মতোই ঘাঁপত্রের সঙ্গে পরম সৰুখে বাস করিতে পারিত, তাও গ্রামের লোক ভাবিয়া পাইত