পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথাসাহিত্যের ধাত্রীবাড়ি সত্তরের আগে কবির শহর শিলচরে গদ্যের কোনও উপনগরী গড়ে ওঠেনি। তাঁবুও পড়েনি কোথাও। কিচ্ছার আদলে গোল গোল গল্পের গ্রাম ছিল। হইচই হবে মানবেন না অনেকে বলবেন অমুক ছিল তমুক ছিল। নামের দাবিদার বাড়বে। তবে বাড়াবাড়ির যদি কিছু হয়ে থাকে, তা হয়েছে অনিশ শতক্রতুর আমল থেকে। অনিশের অদ্বিতীয় এক এবং শতক্রতুর এক মেঘনাদ সম্পাদক ভাস্করানন্দ শর্মা এই দুই-এর আর্থিক আনুকূল্য এবং দক্ষতায় গড়ে উঠেছে গদ্যসাহিত্যের পৃষ্ঠভূমি। প্রবাল দ্বীপের চূড়া জলধি ভেদ করে উঠেছে। গদ্য চায় পরিসর আর পরিসর কিনতে হয় অর্থের বিনিময়ে। তাই দুই সম্পাদককে হতে হয় কাবুলের আন্তর্জাতিক বা ঘড়ি ট্রানজিস্টারের বিদেশি পণ্যবর্জনকারী স্বদেশি। ধাঁধার উত্তরে যদি রক্ষা পায় কায়রো নগরী, কাবুল ঘড়ি ইত্যাদির ধাঁধা বিক্রি করেই বীজধান কিনেছিল অনিশ শতক্রতু। নাগরিকতার বিন্যাসে কবিতা বাসমতীর সুঘ্রাণে বিকল্প কখনও হতে চায়নি গদ্যের কালাজোহা। গদ্যে পদ্যে বিরোধ নেই কোনও। এরকম কোনো সোনার পাথরপ্রতিমা কল্পনাও করেনি কেউ। নইলে কি আর কবিতাভূমির সদ্যপ্রয়াত রাজাধিরাজ শক্তিপদ ব্রহ্মচারী এক গদ্যশ্রমিককে বলতে পারতেন 'কলজে ফাটানো লেখক'। সলতে পাকানোর কালের শেখর দাশ দু-চার কথা না লিখলে তো শুরুতেই দাঁড়ি বসাতে হয়। কথাসাহিত্যের ধাত্রীবাড়ির নাম তাই কবিতাভবন। কবিতার আঁতুড়ে যে ওঁয়া করেনি সে কেমন কথক। কবিতায় শুরু করলে বিচিত্রগামী হওয়া যায়। কবিতার প্যাডেল ঘুরিয়ে যাওয়া যায় সকলখানে। বন মাদ্রিদ শ্রীকোণা ঋক সাম ঘুরে পৌঁছানো যায় যজুর্বেদে। উল্টোপায়ে হাঁটার চেষ্টাও করেননি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বা দেবেশ রায় এমনকি সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়। প্রতিপক্ষ হিসেবে জোর সওয়াল করতে পারে আত্মপ্রকাশ ঘাসফুল বা জিপসীর তাঁবু। মনন ও নির্মাণের চূড়ান্তে কবিতা বলেই হয়তো ইতিহাসের পথ এমত। ভাষা সাহিত্যের জাদুশব্দ খুল যা সিমসিম গড়তে পারে কবিতাই। কবিতার পথ দিয়ে না গিয়ে সরাসরি পাথর ঠেলে পাহাড় চূড়ায় উঠেছেন অনেক গদ্যশ্রমিক আর পাথর-গদ্য গড়িয়ে পড়েছে হুড়মুড়িয়ে যেমন পড়ে। আবার ওঠে। কবিকে ভয় করলে গদ্যটাও লেখা হবে না ঠিকঠাক। কবির কথায় থাকে কল্পনা, বিভ্রমও কিছুটা। সবটা মানলে চলে? কবি বলেন, 'নাভির নিচে আর নেমো না।' সেই সত্য হলো। গদ্যশরীরকে অবহেলা করলে চলবে কেন। কবিই যদি শেষ কথা বলবেন তবে দিস্তে-পর দিস্তে ভরিয়ে গদ্য কেন। 'নষ্ট শশা” হরিণেরা' নামের গদ্য কেন ।