পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ১০০ নন্দিনীকে দিয়ে গদ্যরাজার অ্যামবিগুইটি তৈরি হয়। কবি বীরেন্দ্রনাথ রক্ষিত চুম্বনকে তরমুজ খাওয়ার মতো বললেই লেখা হয় 'তরমুজ' নামের কথাকাহিনি। তাহলে কি কবিতা গদ্যের পরিপূরক শক্তি। না না এসব বিতর্কে জড়িয়ে পড়া মন্দকথা। কবিতা কথার প্রতিবন্ধকও নয়। তবে কবিতায় আছে লোভের আঠা। দুরত্ত গদ্য লিখতে কবিতার দ্বারস্থ হতেই হয়। আপন কবিত্ব থাকলে খরচ বাঁচল কাস্টিং এর নইলে ধারের কারবার। কবিতায় ভাবকল্পের ছড়াছড়ি। রবীন্দ্র কবিতার প্রতিটি শব্দই এক-একটি অনন্য বাগ্ধারার হীরকদ্যুতি। আছেন কবি জীবনানন্দ। জয় শক্তি সুনীল। উৎপল কুমার বসুকে গদ্যে টেনে আনার সাহস করবেন না কেউ। উনুনে ফুঁ দেওয়ার বাঁশের চোঙকে কেউ লিখতে পারবেন ‘ফুঁ দেওয়ার বাঁশের সরল শাখা।' কবিতা কি তবে বেশি বলছে। নাকি নাগরিক বুদ্ধিগ্রাহ্য কবিতায় গ্রামীণ সারল্য বেমানান। চাতুর্যে বিদ্ধ করতে হবে পাঠককে। জটিল জীবনকে আরও জটিল করে দেওয়া। কবিতা যে শুনি মেঘলা দুপুর নাম নিয়েছে কোন সকালে। সত্য সকলই সত্য। জটিল নয় দুর্বোধ্যও নয় কবিতা । পুরোনো শব্দে নতুন মাত্রা দিয়ে, উদ্ভাবনীর পরশ দিয়ে কবিতার ভাষাকে জাগিয়ে রাখতে হয়। জীবন্ত ভাষাও যে মরণশীল। আয়ু বড়ো কম। শব্দ আর বাক্যের রসায়ন কতদিন চলে। পুনঃপৌনিকতা দোষে দুষ্ট হবেই। বিদ্যাসাগরের ভাষা যদি বঙ্কিমে সংস্কৃত, বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথে, জীবনানন্দ ব্যবহারে শানিত। সুনীল শক্তি শঙ্খ জয় পর্যন্ত গিয়েই থেমে গেছে দিগন্ত-রেখা। এরপর হয়তো নতুন আরম্ভ। ওইখানে যেয়ো না কো কয়ো নাকো কথা ঐ যুবকের সাথে। ‘কো’ এর অনুপ্রাস উঠিয়ে দিলে কোথায় থাকেন জি দাস কবি। বাঙালি এখন আর কথায় 'কো' ব্যবহার করে না। জেলার ভাষা নিয়ে কোনো বিরোধ ছিল না অখণ্ড বাংলায় । এখন দ্বিখণ্ডিত-র চাপে দিশাহারা প্রথম ভুবন। পশ্চিমবাংলা ভুবনের ভাষা তার স্থানীয় রূপ হারিয়েছে। ওপার থেকে যে সমৃদ্ধ কথ্য ভাষা নিয়ে এসেছেন ভানুবাবুরা। শাস্তিপুরের ভাষা বলে কোনও ভাষা নেই আর । বাংলার গ্রাম নেই শহর নেই চরিত্রবান। ব্যোমকেশ-এর মেসবাড়ি নেই। কিনু গোয়ালার গলি পর্যন্ত নেই। ধলেশ্বরী নদীতীরে পিসিদের গ্রাম কবেই ধুয়ে মুছে সাফ। গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার আর পুলকবাবুর রোজগার বন্ধ। জয় দাদার কবিতাপাঠক খুঁজতে যেতে হয় বিগত শতাব্দীতে। বেণীমাধব তো লোপাপিসির গান। নবীন বাঙালির জন্মের ওপরও ‘রোক’ লেগে লেছে। বাঙালি মেয়ে বাংলা পড়ে না। এক বিদেশি আর দুই স্বদেশি ভাষার দ্রবণ এখন বাঙালির ঘরে। e-ভাষায় কবিতা লেখা হচ্ছে। পৃথিবীর সব জীবন্ত ভাষাই এখন নতুন বাঁক মুখে। বাঁচবে না ঠুটো থাকবে। রিমেক কবিতা হচ্ছে যে। বিখ্যাত কবিতার লাইন নতুন করে গড়াপেটা হচ্ছে। এরা কারা। দূরের মানুষ কাছের মানুষ। খুব কাছের সৃষ্টিশীল কবি এরা। এরাও পাঠক চান, উদ্দেশ্যহীন লেখালেখির মানে হয় না। তারা কবিতার চলন বদলে ভাষা বদলে দক্ষতার পরীক্ষক হতে চান। কবিতার ভাষা বদলে যাওয়া মানে তো যুগান্তর। গতি নেওয়া বাঁক খাওয়া। বড়ো বড়ো ড্যাম হচ্ছে ভাষামুখে। ইঙ্গমার্কিন বিশ্বায়নের বর্জ্য। সত্য এরকম হয় না, কবিতাও