পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১০৬ বাংলাদেশ ঘেরা আংশিক বন্দীত্ব আর ঘুচল না। দেশ ভাগের আগে ত্রিপুরা ও বরাক উপত্যকার যাতায়াত ছিল সহজ। পূর্ব বাংলার ভিতর দিয়ে স্থলপথ ও জলপথের অবাধ যাতায়াত। জোড়াতালি দেওয়া সীমানা পেরিয়ে প্রথমে হিন্দু শরণার্থীর ঢল নামল ত্রিপুরায় বরাক উপত্যকায় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। যাঁরা থাকলেন ওপারের স্বপ্নের দেশে, মূলত মুসলমান কৃষক জনগোষ্ঠী, তাঁরাও বুঝলেন মুসলিম লিগের আশ্বাসের অসারতা, তাঁরাও সীমান্ত পেরিয়ে চলে এলেন ব্রহ্মপুত্র পারের উর্বর অববাহিকায় । হয়তো একটা সংগঠিত চাতুর্য কাজ করেছিল তাঁদের মনে তাই তাঁরা জীবন জীবিকার সুরক্ষায় নাম নিলেন অসমিয়া, বাঙালি পরিচয় ঘুচিয়ে হলেন ন-অসমিয়া বা নতুন অসমিয়া । ইতিমধ্যে আসাম ভেঙে অনেক রাজ্য গঠিত হল, হল স্বশাসিত জেলাও। রাজনৈতিক ভূগোল পোকায় কাটতে কাটতে যখন ছোটো হয়ে এল তখন শুরু হল ভাইয়ে ভাইয়ে লড়াই। হিন্দু-মুসলমান, বাঙালি অসমিয়া, অসমিয়া মাড়োয়ারি বড়ো অবড়ো নেলি গহপুর এবং কে জানে ভবিষ্যতের গর্ভে আরও কী রয়েছে ভয়াবহ। তবে সুখের বিষয় ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নবীন প্রজন্ম শিখে নিয়েছে প্রতিরোধের পাঠ, তারা ভাবাবেগের সঙ্গে যুক্তিবুদ্ধিকে প্রাধান্য দিচ্ছে, শান্তিতে বসবাস করার মন্ত্র শিখে নিয়েছে। এরকম একটা সিনোপসিস করা যায় উত্তর-পূর্বের। যদিও ভাষা সাহিত্যের কথায় যাওয়ার আগে আরও দু-একটা কথাও প্রাসঙ্গিকভাবে এসে যায় ৷ দেশভাগের ইতিহাসে সিলেট রেফারেণ্ডামের উল্লেখ হয়তো থাকে এক লাইনের এবং অবাক করার মতো বিষয় হল তার পরিপ্রেক্ষিত এবং পরবর্তীকালের প্রভাব নিয়েও কোনো সমাজতত্ত্ববিদ কিংবা ইতিহাসকারও দায়িত্ব নেননি। একমাত্র একজনই বরাক উপত্যকার এক ভুক্তভোগী সমাজতাত্ত্বিক সুজিৎ চৌধুরি বলেছেন, সিলেট গণভোট না হলে আসাম আন্দোলন হওয়ার কোনো কারণ ঘটত না। সিলেট তো চলে গেল বাংলাদেশে। শরণার্থী হিন্দুরা স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে থেকে বরাক উপত্যকায় গড়ে তুললেন এক নতুন সমাজ, নতুন ভাষাও গড়ে উঠল সিলেটি উপভাষা আর তৎকালীন কাছাড় জেলার বাংলা উপভাষার মিশ্রণে। ঠিক একই রকম ত্রিপুরায়ও উপজাতিদের সঙ্গে মিশে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কুমিল্লা আর সিলেটির মিশ্রণে গড়ে উঠল নতুন উপভাষা। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় আবার পূর্বোক্ত উপভাষাগুলির সঙ্গে রেলশহরের চট্টগ্রাম নোয়াখালি আর গোয়ালপাড়ার সঙ্গে অসমিয়ার মিশ্রণে তৈরি হল নবীন আর এক ভাষা। দেশভাগের পর শরণার্থীদের মধ্যেও দেখা দিল বর্ণসংকট, জেলাসংকট, উচ্চবর্ণ নিম্নবর্ণ জমিদার রায়ত এবং গ্রাম পরিচয়ে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের লড়াই চলতে থাকল। তার উপর অর্থনৈতিক সংকট হয়ে উঠল প্রধান। সব অতীত জমিদারদের শূন্য থেকে শুরু করতে হল জীবন। জীবন ও জীবিকার লড়াই করতে করতে ক্লান্ত নতুন ইহুদির এক যুগেরও বেশি সময় কেটে গেল প্রস্তুতি পর্বে। দেশভাগের চোদ্দবছর পর রবীন্দ্র শতবার্ষিকীর সরকারি উৎসব পর্যন্ত গৌহাটিতেই সীমাবদ্ধ থাকল। এর মধ্যেই