পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১০৭ আসামের কংগ্রেসি সরকার কুখ্যাত ভাষা আইনের খসড়া পাশ করিয়ে নেয় দলীয় সভায় এবং সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে শিলং বিধানসভায়ও। বরাক উপত্যকা যেহেতু মূলত বাঙালি প্রধান জেলা, আন্দোলন শুরু হয়ে যায় রবীন্দ্র শতবর্ষের মাসেই উনিশে মে ১৯৬১তে। সেদিনই শিলচর রেলওয়ে স্টেশনে এগারোজন শহিদ হয়ে যান। শহিদের রক্তে বাংলাভাষার সীমিত স্বীকৃতি পাওয়া গেলেও, ভাষিক আগ্রাসন না থামায় দফায় দফায় ভাষা সৈনিক শহিদ হয়েছেন। পরিতাপের কথা, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় হয়তো পশ্চিমবঙ্গের এবং সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যম সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিবিদরাও পলিটিক্যালি শুদ্ধ থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তিমির ঘোচেনি। এমনকি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সংখ্যালঘু বাঙালিরাও সংখ্যাগুরুর ভয়ে সহমর্মী হতে পারেন নি। সারা ভারতে কোথাও চোখে পড়ার মতো কোনো সাহিত্য কর্মও হয়নি এত বড়ো আত্মত্যাগের উপর। উল্টে, বরেণ্য এক সাহিত্যিক বললেন, এসব আন্তঃরাজ্য সমস্যা। রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তিনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় । ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি উনিশে মে নিয়ে সোচ্চার না হলেও অস্বীকার করেন না একুশে ফেব্রুয়ারির সহোদর দিনটিকে। দেশভাগের পর উত্তর-পূর্ব ভারতে বাঙালির আত্মপরিচয়ের এতবড়ো অভিজ্ঞানকে অমান্য করেন কীভাবে। উনিশে মে-র আগে উত্তর-পূর্বের বাঙালি ছিল বিভিন্ন পরিচয়ে বিচ্ছিন্ন, ব্রাহ্মাণ কায়স্থ মুসলমান, এমনকি পূর্বনিবাস জেলার পরিচয়ে খণ্ডিত। উনিশে মে-র পর হয় নবজাগরণ, নতুন দেশের নবীন নাগরিক সাবালক হয়, হয় বাঙালি। ফলত সূচনা হয় সাহিত্য আন্দোলনের। বাংলা ভাষায় কবিতা লেখা শুরু হয় বরাক উপত্যকাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। কবিতার ছোটো পরিসরে হয় আত্মপ্রকাশ। ব্যক্তিগত উচ্চারণ বলে আন্দোলনের রূপ নিতে পারে নি ‘এই আলো হাওয়া রৌদ্র' এক ও দুই। গদ্যসাহিত্য কথাসাহিত্য তখন নাবালক ও নয়, ভূমিষ্ঠ হওয়ার মতো ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল না। কারণ অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, কবিতা যেখানে ছাপানো যায় সস্তার কাগজের এক ফর্মায়, গদ্যের জন্য কম করেও চাই চার ফর্মা। তাই গদ্য উপন্যাস ছোটোগল্পের কথা ভেবেছেন খুব কমজনই। ভাবলেও লিখলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে সরাসরি বই ছেপেছেন। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বরাক উপত্যকা ছাড়া প্রধান দুটি কেন্দ্র রয়েছে ত্রিপুরায় ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায়। ত্রিপুরার আগরতলায় বিশাল কেন্দ্র ছাড়া কুমারঘাট থেকেও ইদানীং সমৃদ্ধ পত্রপত্রিকা ও কথাসাহিত্যের উপর বই ছাপা হচ্ছে। যদিও সরকারি আনুকূল্য পাওয়া যায় যথেষ্ট। স্বনামধন্য অনেক কবি সাহিত্যিক গর্বিত করেছেন ত্রিপুরা তথা উত্তর পূর্বাঞ্চল সাহিত্যকে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় গৌহাটি সবসময়ই অসমিয়া-বাংলা সাহিত্যের মিলনক্ষেত্র হয়ে আছে। কয়েকটি উচ্চমানের লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে এবং হচ্ছে নিয়মিত অনিয়মিত। অধুনালুপ্ত পূর্বদেশ গল্পপত্র শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নয়,