পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ১১০ ব্যবস্থা ছিল কলকাতা থেকে লক্ষ্মৌ থেকে। এখনও তেমন ব্যবস্থা আছে তবে তার অভিমুখ পাল্টে গেছে, কলকাতা থেকে খুব কমই আসে ডাকে, কিন্তু উত্তর-পূর্ব থেকে সাহিত্য শতক্রতু দ্বিরালাপ মানবী ব্যতিক্রম উজ্জ্বল পাণ্ডুলিপি ঈশান প্রতিস্রোত পূর্বাদ্রি মুখাবয়ব যাপনকথা প্রবাহ কিন্তু ডাকে যায় ভারতের গ্রাহকদের কাছে এমনকি বিনামূল্যে আগ্রহী পাঠকের কাছেও। কলকাতার পত্রপত্রিকার প্রচারের অভিমুখ সিউড়ি কাটোয়া শিলিগুড়িতেই সীমাবদ্ধ। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় যোগাযোগ বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় এসে যাওয়ায় আর অভিযোগ থাকল না। এ তো গেল বহিরঙ্গ কথা। তাহলে আর বাধা থাকল কোথায়, উত্তর ভারত আর পূর্ব ভারতের দেশ ভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এক বিভাজন কথার দলিল লেখার শুরু হয়েছে এখন। এতদিন তো আক্ষেপ ছিল অতীন বন্দ্যোপাধ্যায় আর প্রফুল্ল রায় ছাড়া এপারের কেউ লিখলেন না দেশভাগ তেমন করে। তাই হয়তো এখন বন্যার মতো দেশভাগ-কথার দলিল লেখা হচ্ছে নতুন উদ্যমে, হয়তো বহুব্যবহারে তার গুরুত্বও অনেকটা হারিয়ে যাচ্ছে, একই গল্পকথা বিভিন্ন কলমে ভিন্ন মাত্রা নিয়ে উদ্ভাসিত হচ্ছে, লিখিত হচ্ছে দয়াময়ীর কথা এবং আগুনপাখি। তবে বাংলা সাহিত্যের বিশাল ভুবনকে এখনও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের দেশভাগ, গণভোট নতুন দিগন্তের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারে। যেমন নিয়ে গেছে মলয় কান্তি দের আসরাফ আলির স্বদেশ, স্বপ্না ভট্টাচার্যর উজান, শেখর দাসের উপন্যাস বিন্দু বিন্দু জল, মিথিলেশ ভট্টাচার্যর ফটিক চাঁদের ভিটেমাটি। ইদানীং কবি সাংবাদিক অতীন দাস, মোজাম্মিল আলি লস্কর এবং ইমাদ উদ্দিন বুলবুল লিখছেন প্রেক্ষিত বদল করে। দেশভাগের কথকতা এক যৌথ বয়ানের কথা। তাই নাম না লিখলেই হত। দেশভাগ এক বিশাল জনগোষ্ঠীকে বন্ধক-শ্রমিক করে তুলেছে। ভিটেমাটি উচ্ছেদ করে অনিশ্চয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। আবার নতুন করে যাত্রার বার্তা শুনিয়েছে, যে গমন খুব মসৃণ নয় কখনও। এক্সোডাসের দুঃখে নয় বরং যৌথ চলার আনন্দে, মানুষ গড়েছে নতুন বাসভূমি। সেই চলার কথা ষাট সত্তর বছর পর লিপিবদ্ধ হলে ক্ষতি কী। সহযোদ্ধা অনেক লেখকই মণিমুক্তো আহরণ করতে পারেন নি সঠিক সময়ে, অনেকে আক্ষেপ করে মা এখন কানে শুনেন না। যখন বলত পথের কথা শিবিরের কথা বুঝিনি গুরুত্ব। অনেকে পেরেছেন সাজিয়েছেন, বিদ্বেষের বর্জ্যটুকু ছেঁকে নিয়ে গড়ে তুলেছেন নতুন ইহুদির জীবন-গাথা । উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভারতের একটি ক্ষুদ্র ভূখণ্ড, কিন্তু বৈচিত্র্যে ভরপুর তার জনপদ। কত ভাষা কত সংস্কৃতি আর বাংলা যেহেতু একটি প্রধান ভাষা তাই বাঙালি কথাকারেরা লিখেছেন প্রতিবেশি কথা। অরিজিৎ চৌধুরি শ্যামল ভট্টাচার্য দেবব্রত দেব লিখেছেন বৈচিত্র্যের মধ্যে মিলনের কথা। প্রাবন্ধিক সম্পাদক দেবাশিস দত্ত নাগা উপকথার সংকলন সাজিয়েছেন। হিন্দু-মুসলমান আর অসমিয়া বাঙালি সম্পর্ক নিয়েও লেখা