পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১১৫ এইখানে পা রেখে জানি মিথ্যে এ ছিন্নতা।'—শঙ্খ ঘোষ বরাক উপত্যকার সাহিত্য-ভাবনায় আমার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করার আগে বিষয়-নির্দিষ্ট করে নিতে চাই। বিষয় হওয়া উচিত ছিল 'বাংলা ছোটোগল্প : বরাক উপত্যকার কথা-বয়নে উপভাষা'। কোনো রিপোর্ট বা গবেষণাপত্র নয় এ প্রয়াস। মানুষের কথা, মানুষের ভাষা তার অভিব্যক্তির সচলতম প্রকাশ, বরাক উপত্যকার বাংলা ভাষাও তার ব্যতিক্রম নয়। বাংলার মূল দুই ভুবন থেকে দূরে, অনেকটাই দূরে। ভৌগোলিক দূরত্ব এক অংশের সঙ্গে, অন্য অংশ রাজনৈতিক সুদূরতায়। এত দূরত্ব সয়েও সুন্দরী বরাকভূমি তার ভাষা সাহিত্যে দুই ভুবনের উজ্জ্বল উত্তরাধিকার বহন করে চলেছে দায়িত্ব সহকারে। এই ভুবনে, মানুষমনের বিভিন্নতা, বৈচিত্র্য, জটিলতা সবই আলাদা। দুই ভুবন যত কথা বলে, তৃতীয় ভুবনের কথা তার থেকে কম নয় কিছু। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কলকাতার মহানাগরিক আতান্তর বা সুখ নেই সত্য, তবু শিলচর করিমগঞ্জ হাইলাকান্দি, লালাবাজারই বা কম কীসে, সংকেত বিপ্ বিপ্ করছে সব ঠাঁই। সংকেত ধরতে কথাকারেরাও নিশ্চুপ বসে নেই। অকথিত নয় বলেই বরাক উপত্যকার ছোটোগল্প এখনও সাহিত্যের দুরন্ত প্রাণময় অংশ। বরাকভূমির ছোটোগল্প হাড় মাংসকে শক্ত ও পেশীবহুল করতে, রক্তকে সচল দ্রুতগামী করার হৃদয় ও মস্তিষ্ককে সতেজ দুরন্ত রাখছে। তিন - বরাক উপত্যকার কথারচনার পরম্পরা, ইতিহাস একেবারে অর্বাচীন নয়। এই ভুবনের কথাচর্চার বর্তমান শৈলীর উত্তরাধিকার আমরা নিশ্চিন্তে সুরেশচন্দ্র চক্রবর্তী থেকে শুরু করতে পারি। অন্য তিন সমসাময়িক কথাকার – রামকুমার নন্দী, লাবণ্যকুমার চক্রবর্তী বা সুরেন্দ্রলাল সেনগুপ্তর কোনো মুদ্রিত রচনা না থাকায় গদ্যভঙ্গির ধারণা রচনাকারের সাধ্যের বাইরে। কলকাতার তৎকালীন মূল বাংলা গদ্যভঙ্গিতে রচিত সুরেন্দ্রকুমার চক্রবর্তীর উপন্যাসের ভাষা কখনই এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে রচিত মনে হয় না । ‘বদরপুর স্টেশন ছাড়িয়া কিয়দ্দূর গিয়াই প্রশস্ত 'বরাক' নদীর উপর সুবিশাল লৌহসেতু—ইহাও স্থপতি বিদ্যার এক আশ্চৰ্য্য কীর্তি। ‘সেতু উত্তীর্ণ হইয়াই গাড়িখানি দেখিতে দেখিতে নীরদের কল্পনা চিত্রিত সেই শৈলমালার সম্মুখীন হইতে লাগিল। নীরদ হর্ষ বিস্ময়োৎফুল্ল লোচনে চাহিয়া দেখিল - . কী বিরাট, কী মনোহর—কী মহিমময় সে দৃশ্য। অত্যুচ্চ পর্বতরাজি—একটির পশ্চাতে আরটি মাথা তুলিয়া দাঁড়াইয়া আছে। দেখিবামাত্রই মনে পড়ে কবির সেই ভাবচিত্র— 'অদ্রির উপরে অদ্রি, অদ্রি তদুপরে' (নারীশক্তি বা অশ্রুমালিনী)' ষাট সত্তর বৎসর আগে বরাকভূমির রূপ তার সৌন্দর্য বাখানির শক্তিধর কথাকারকে