পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ১১৬ অভিবাদন জানাতেই হয়। সেই সময়ে কোনো ছোটোগল্প বরাকভূমিতে রচিত হয়েছে কিনা সে-তথ্য তো অজানা। কথাকারের, ছোটোগল্পকারের মানসিকতার অভাব ছিল না অশ্রুমালিনীর লেখকে। হয়তো তৎকালীন বরাক উপত্যকায় সাহিত্যিক পরিবেশ, প্রকাশ-মাধ্যম, ছাপাখানার অভাব লেখককে বিচিত্রগামী হতে দেয়নি। কুললক্ষণ স্থির হলেও লিখনশৈলীতে বঙ্কিমী ধারার অনুকরণ থাকায় উল্লিখিত উদ্ধৃতিমধ্যে বদরপুর আর বরাক এই শব্দ দুটিই আমাদের হর্ষ বিস্ময়োৎফুল্ল হয়ে ওঠার কারণ হয় মাত্র। একটা সময় পর্যন্ত বরাক উপত্যকার কথাকারদের সৃষ্ট চরিত্রেরা বাংলার স্বীকৃত ভাষায় কথা বলেছেন। বিবরণের ভাষাকে মেনে নিলেও, 'আইচ্‌চা’, ‘কেনে’, কিতা’বা ‘মাত’ স্বীকৃত বাংলায় অনুবাদ করে গল্পকথাকে কালোত্তীর্ণ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব ছিল। শিকড়ের সোঁদা শৈশব-ঘ্রাণ লেগে আছে তার অন্ত্যজ জীবনে, ব্রাত্যকথার কথনেই মুক্তি, অনেক পরে এ সার জেনেছেন বরাক উপত্যকার কথাকারেরা । সংলাপের সমস্যা প্রধানত নাট্যকারের ও কথাসাহিত্যিকের। বরাক উপত্যকার নাট্যকার চিত্রভানু সিলেটি উপভাষায় নাটক লিখে পুরস্কৃত হয়েও অতৃপ্ত। প্রশ্ন করেন, বরাকের উপভাষায় নাটক কতটা রসোত্তীর্ণ, পুরস্কার কি নতুনত্বের স্বীকৃতি, নাকি উপভাষার কমিক এফেক্ট, কী দিয়ে পাঠক, দর্শক শ্রোতা আকর্ষিত হচ্ছেন। আবার জবাবও দেন, দীনবন্ধু মিত্র অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করেছেন। তীর্থঙ্কর চন্দ, আর এক নাট্যকার, কলকাতায় থেকে দুর্ধর্ষ নাটক লিখে বিখ্যাত নাট্যগোষ্ঠীর পুরস্কার শুধু না, পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাদেমি পত্রিকায় পরিপাটি ছাপা হয়েও বেরোল বরাকের উপভাষার নাটক। চিত্রভানুর জবাবই সঠিক, দীনবন্ধু মিত্রর নাটক যদি বাংলা নাটক হয়ে থাকে, হুতমো, আলালী যদি বাংলা হয় বরাকের উপভাষাও বাংলা নিশ্চয়। এই উপভাষার লোকায়ত পেশির জোরে তাঁরা কেন সাহিত্যে নতুন নির্মাণ উপকরণ নিয়ে আসবেন না! মানুষের মুখের ভাষাই তার সাহিত্যের ভাষা হবে। বরাক উপত্যকায়ও তার কথাসাহিত্যের প্রধান উপাদান হচ্ছে তার নবীন উপভাষা। সিলেট, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও স্থানীয় কাছাড়ি মানুষের মুখের কথা দিয়ে তৈরি এ ডায়লেক্ট। কাছাকাছির চা শ্রমিকদের ভাষা, অসহজ মণিপুরিও অনেকটা মুখের কথায় এসে গেছে। এর বিপরীতে নাগরিক বাংলা বা স্বীকৃত বাংলা তো উপত্যকার কোনো শহরেরই মুখের ভাষা নয়। গ্রামের মানুষ শুদ্ধভাষায় কেউ কথা বলছে শুনলেই বিদ্রূপে মুখর হয় 'তাইন ছাপার অক্ষরে মাতিত্রা'। তবে কেন এ অনুবাদের বাংলা ! এমনকি লিখনশৈলী, বাক্যরীতিতে ও মূল বয়নেও যদি মুখের ভাষার কিছুটা অনুপ্রবেশ ঘটানো যায়, বাংলা সাহিত্যের দিগন্তই বাড়বে। বাড়বাড়ন্ত দেখতে হলে রচনাশৈলীতে লোকায়তিকের অনুপ্রবেশ ঘটাতে হবে, উপভাষার সম্পূর্ণ ভিতটাই তো লোকজীবন-নির্ভর। লোকজীবন জুড়ে আছে লোককথার অগাধ ভাণ্ডার আর সমৃদ্ধ পুরাকথা, কথাসাহিত্যে এই উপকরণ দুটি বড়ো জরুরি। এই প্রসঙ্গে তপোধীর ভট্টাচার্য কথাবয়নে বিকল্প-বাস্তবের কথা বলেছেন,