স্থানিক ও কালিকমাত্রায় বিশ্বস্ত থেকে উপভাষার ঢঙে তৈরি কৃত্রিম বাক্রীতিই হবে উত্তরণের বিকল্প-বয়ন। এই বিকল্প বাস্তবের দিকে বিকল্প বয়ন রীতির পথ উপল-বন্ধুর বলে পরিহারের অবকাশ নেই। ঠাক্মা দিদিমার ঝুলি ঝেড়ে সাত রাজার ধন অনেক মাণিক কুড়িয়ে পাওয়া যাবে আর কথা-বয়নে অনাগরিক মানসিকতা উপভাষাকে সুয়োরানীর মর্যাদা দিতে পারে। আলোচনার শিরোনামে ‘সমস্যা’ শব্দটাই আমাকে সমস্যায় ফেলবে, আশঙ্কার কারণ বরাক উপত্যকার স্বয়ম্ভরতা।
চার
এত যে লোককথা, প্রত্নকথার প্রসঙ্গ আসছে ঘুরে-ফিরে বরাক উপত্যকায়, এর ব্যবহার যে কেউ কেউ করেননি তাও তো নয়। কথাকার দীপেন্দু দাসের ‘চাঁদ সদাগর’, ‘রোদরাজা মেঘরাজার গল্প’, উপত্যকায় নতুন কথাভাবনার দিশারী নিঃসন্দেহে। দীপেন্দু বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে গেছেন তার কথা অন্বেষণে। জীবনের কিছু আলোহীন অংশকে অন্ধ আলো নিয়ে খুঁজতে চেয়েছিলেন বলে বিতর্কসঙ্গী ছিল তাঁর কোনো কোনো রচনা। তবে উপভাষার ব্যবহারে এখনও নাগরিক দীপেন্দু।
ঠাক্মা দিদিমার ঝুলির ধন যদি চুরি করে নিয়ে যায় কেউ, কেমন লাগে! মানবাজারের উপভাষায় সৈকত রক্ষিত আমাদেরই এক ‘কিচ্ছা’র অংশ ব্যবহার করে আমাদের বলেন,
‘কুটুর কুটুর পান চিবাছো
দিঘল দিঘল দাড়ি
খুটুর মুটুর কী ভাইলছো
কথায় তুমার বাড়ি?
লছুও তালে তালে থুতনি নেড়ে দেখায়। কখনো সে বাঘ সাজে, কখনো ছাগল। ছাগলটির মৃত্যু অনিবার্য জেনে বাঘের কাছে বিরাট করে তার পরিচয় দেয়। তারপর বীরোচিত গর্ব নিয়ে বলে ওঠে:
বাঘ মারলম শিয়াল মারলম
আর মারলম হাতি
যার গায়ে টিকা ফঁটা
তাকেই নাই পছি।
এই শুনেই বাঘ উল্টো দিকে ঘুরে চম্পট দেয়। লঘু কাছা খুলে হামাগুড়ি দিয়ে পালাতে থাকলে বাচ্চাগুলো হেসে গড়িয়ে পড়ে। তাদের কোমরের ঘুনসিতে বাঁধা ভেলা বিচিগুলো দোল খেতে থাকে সেই হাসির শব্দে।
মনে পড়ে আমাদের ‘কিচ্ছা’:
‘ছুচিমুখো ঘুচি দাড়ি