খনে খনে মুখ লাড়ি
সিংহের ভাগিনা আমি
নরহরি দাস
আঠারো আঠারো বাগে
এক্কই গরাস
এক বাগে এক পানিতরাস।’
‘এই শুনেই বাঘ উল্টো দিকে ঘুরে চম্পট দেয়।’ কিচ্ছার শেষেও তো এক চম্পটের কথাই থাকে।
মানবাজার ছাড়িয়ে এবার দখ্নো দেশ-এর এক কথাকার অনিল ঘড়াই ‘কটাশ’ গল্পে ভাম/কটাশ মানুষের গল্প এক গানের কথা পাল্টে অসাধারণ দক্ষতায় রসোত্তীর্ণ করে তোলেন—‘পুকুরেরি পাড়ে খড়ি বেড়ার ধারে/ হংস বসিয়াছিল/ কটাশ আসিয়া পটাশ করিয়া হংস লইয়া/ গেল গো-ও-ও!’ কটাশ তো আমাদের খাটাশ। তিনি অন্য গল্পের শুরুও করেন বাউলের তত্ত্বমুখী গানের সাথে, দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার মাটির রস টেনে আনেন কথা-বয়নে। মাটির টানে গাছে ভাঁড় বেঁধে দেওয়া—
‘গাছে ভাঁড় বেঁধে দেনা, বেঁধে দেনা—
রস খাবি তুই জিরেন কাটের
গুড় খাবি মিছরি দানার।
হাতে গোনা, ঠিক বুকের এক বিঘৎ নীচে ডুগি—ভুবন বাউলের দিঘল প্রসারিত চোখে বিস্তীর্ণ মাঠের দিকে মেলা। বাঁধ যেখানে কাছিমের পিঠের চেয়েও উঁচু, আকাশ যেখানে হাতের মুঠোয় ধরা যায়— সেই বিশেষ জায়গাটি গাঁয়ের একেবারে পিছনে, অনেকটা লেজের মত দেখতে হলেও—এই বিশেষ জায়গাটা ভুবন বাউলের খুব পছন্দ’। (ভুবন বাউল)
অনিল ঘড়াই যদি অনেক কথা বলে ভুবন বাউলের মনপছন্দ জায়গায় গিয়ে বসেন, এই বরাক-ভুবনের আর এক অবাক কথাকার কম কথায় অনেক কথা বলার দক্ষতা দেখাতে পারেন। তিন দেবাশিস তরফদার—
‘ওধারটায় ঘাস। একটা মাত্র গরু। চাঁদ কপালী। গরুর পিঠে রোদ। সরে যাচ্ছে। কথা বলতে বলতে সরে যাচ্ছে। হঠাৎ মনে পড়লো ‘বিকেল ঝিল পাখি’। কেনো মনে পড়লো বলা মুশকিল। আমার দেশের ভাষায় বলে ‘হুদা’।’ (ছুটির গল্প)।
এক ‘ছদ্দা’ শব্দে ব্রহ্মস্বাদ অনুভবে আসে। কথার জাল বুনতে হয় না, ফাৎনায় মোক্ষম টান পড়ে ‘হুদ্দা’ নামে এক বিচ্ছিরি সুন্দর শব্দে।
সমস্যার কথা বলতে গিয়ে তুলনা বা কথা থেকে কিছু উদ্ধৃতি দিতেই হচ্ছে। আমরা, আমাদের কথাকারেরা স্বয়ম্ভর, তবু আমরা কেন ব্রাত্যজীবন বরণ করলাম। বরণ, না অভিমানের নির্বাচন, না অন্য কারণ? অভিমন্যু পটুত্বের অসহায়তা কি