পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১২০ করেছে।” (মাসডর বাবু) চেষ্টা করেও বরাক উপত্যকার অখ্যাত কথাকারকে পশ্চিমবাংলার বিখ্যাতদের সমপর্যায়ে নিয়ে আসা যাবে না, এ সত্য জেনেই ভগীরথ মিশ্রের ভাবনাকে সম্মান জানিয়ে, বরাকের সমস্যাকে প্রতিতুলনায় তুলে ধরিনি। কালিদাসের সিদ্ধান্তেরই পুষ্টি করেছি, সংস্কৃতের পাশাপাশি প্রাকৃত সংলাপ যথেষ্ট ব্যবহার করেছেন মহাকবি। আর কথাবয়ন তো সিয়ামিজ সিলেটি অনাগরিকে হবে না, হবে না মাদ্রাজি মানবাজারিতে। ব্যতিক্রমকে সামাল দেওয়া সক্ষম কথাকারের দায়িত্ব । কথাকারের ক্ষমতার প্রশ্নে আবার লৌকিক জীবনে ফিরে যেতে হয়। বরাকের লোককথা, লোকবিশ্বাসের ভাণ্ডার এত অফুরন্ত, কিন্তু কথা বয়নে এত অব্যবহৃত যে ভাবনার চোখ ফেরালেই রত্নভাণ্ডার। সংকেতের সিম্‌সিমকে ভুল করলে চলবে না। বরাক উপত্যকায়ও তো তেমন লোকবিশ্বাস আছে। এক যুগে একবার বাঁশ ফুল ফোটে, মন্বন্তরের পূর্বাভাস দেয়। আমাদেরই ঘরের কথাকে কেমন পেড়ে নিয়ে এক অসাধারণ গল্পে নিয়ে এলেন ভগীরথ মিশ্র— মন্ত্রীর গৃহিণী পিংকি। আজীবন দিল্লীবাসিনী। ‘একবার কৃষিমন্ত্রীর ডিনারে গিয়ে বাঁশের ফুলের ‘ইকেবানা’ দেখেছিলেন পিংকি সে যে কী সুন্দর।” ....তা বলো তুমি বাঁশের ফুল খুইজবে গেরামে গেরামে ঘুরো ? তুমি কি শনি নাকি?' ‘আমি নয়। বাঁশের ফুল খুঁজে উই ডিল্লী উয়ালী ম্যাম সাহাব'। ‘ঘর সাজাবেক।’ বাঁশের ফুল দিয়ে ঘর সাজাবেক ? কী আচানক কথা। বাঁশের ফুলে যে ঘর ভাঙ্গে হে! ঘর ভাঙ্গে। সসার ভাঙ্গে। গাঁ গঞ্জ, বিশ্বভুবন শ্মশান হইয়ে যায়।' (বাঁশফুলের কাব্য) একদিকে একপয়েন্টে ভগীরথ, দুইভুবনের কথাকাররা, এগিয়ে গেলেও দশপয়েন্টে আমরা জিতছি। ভারত জোড়া, বাংলা জোড়া যে জাতিবৈরিতার ভ্রাতৃদাঙ্গা ভ্রাতৃহত্যা চলছে, এর উত্তরে বরাক উপত্যকার কথাকারেরা যেমন জাগ্রত, ভিডিপি-র রাতজাগা প্রহরীরাও তেমন চৌখস থাকে না। জাতিবের বিরোধিতায় তাই নাগরিক সচেতনতার পাশাপাশি মাটির মানুষের কাছাকাছি হতে চেয়েছেন বরাকপারের কথাকারেরা। সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই, এ সত্যে অটল এককাট্টা বরাকভূমির কথাকারেরা। একই প্রসঙ্গে বিভিন্ন কথাকারের উল্লেখ একসাথেই করতে হচ্ছে। প্রথম, দ্বিতীয় এভাবে কাউকেই উচ্চারণে আনা যায় না। বরাক উপত্যকার কথাশিল্পের সাদাবাড়ির স্তম্ভ এই ক-জন। নামে কারো বিশেষণ দিতে হয় না। রচনার উদ্ধৃত অংশগুলি থেকেই তাদের বিশিষ্টতা ধরা পড়বে। শেখর দাশের অনবদ্য গল্পে দাঙ্গাদোসর গুজবের আগুন তার