পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ১২৩

দালাল বানাই থই দিছে।

 বউদিও যেতে দিতে নারাজ, থাকো রেবা কয়দিন, নলবাড়ি সাইডের অবস্থা শান্ত হউক, তার পরে বাড়িত যাইবায় নে।’ (আগুন)

 মনে হচ্ছে যেন আমরা আলোচ্য থেকে সরে এসেছি। বিষয় ছিল উপভাষার প্রায়োগিক সমস্যা। সমস্যা কোথায় থাকল, এ দেখছি প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অপ্রতিষ্ঠ করা। একই বিষয়ে কিন্নর রায়ের গল্পের এই অংশটুকু কি কোনো সীমা নির্দেশ করে। এ গল্পাংশ বরাক-পারের, এটুকু পশ্চিম বাংলার। পশ্চিম বাংলার লেখক হলে বাড়তি সুবিধাটুকু বরাকে অলভ্য। অরিজিৎ চৌধুরির উপরের গল্পটি পশ্চিম বাংলারই এক পত্রিকায় ছেপে বেরিয়েছে যদিও, তবু কিন্নর রায়-এর মতো গল্পকারের পংক্তিভুক্ত হবেন কি প্রধান ভুবনে। অরিজিৎকে ফিরে আসতেই হবে সাহিত্য, অক্ষরবৃত্ত বা ওষধিপত্র পূর্বদেশে। শক্তিমান গল্পকার কিন্নর রায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিপন্নতাকে গল্পের বিষয় করেন—

 “তুই চুপ মার

 তুই চুপ মার

 দু'জনের পরিত্রাহি চিৎকারে গোটাবাড়ি ভূমিকম্পের পটভূমি হয়ে ওঠে।

 তুই বলেচিলি না মাগীটাকে দেখিয়ে—অত ফরসা গায়ের চামড়া।

 আমি বলিচি এই কথা, আল্লার কিরে খা দিকিনি। খায়রুলের কিরে খা—

 সবার কিরে খেতে পারি। তুই আরও কী কী বলেছিস বলব—  বাকি কথা শোনার মতো অবস্থা থাকে না আসগরের।

 নরেন্দ্রপুরের কাছাকাছি আমার দুটো ঘর উঠছে। বনেদ, দেয়াল উঠেছে। লিনটেল অব্দি। খালি ঢালাই বাকি। একটা পায়খানা রান্নাঘর। দেড়কাঠা জমির উপর ওইটুকুর জন্যে এত কষ্ট। আমি, জয়তী, তুলি সবাই কষ্টে।

 কোনো হিন্দু বাড়িঅলা আমায় ঘর ভাড়া দেবে না। আমি মুসলমান। সঙ্গে হিন্দুর সুন্দরী মেয়ে, যে আমার রেজিষ্ট্রি করা বউ। তাই ব্যাপারটি আরও গোলমেলে, হিন্দু বাড়িঅলার কাছে। (আলি আসগর, জয়তী অথবা ধর্মনিরপেক্ষতার গল্প)।'

 সিকমানিয়া আর মাসডর বাবুর সাথে ‘কেশবলালের ভূমিকা’কে এক করে দিইনি, বরাক উপত্যকার অন্যতম সৃষ্টিশীল গদ্যকার মিথিলেশ ভট্টাচার্যকে আলাদা করে দেখার তাগিদে। অনেক লেখার অ্যালান বর্ডার মিথিলেশকেও দেখছি, ইদানীং উপভাষা আর বিকল্প বয়ন সম্পর্কে উৎসাহী হয়ে উঠছেন। কথারচনার মোক্ষম প্যাঁচ-পয়জার মিথিলেশের মতো ক-জন জানে বরাকে। কে বলতে পারে ‘হায় রাম তুই টিরেনচ নাই চিনলিরে, কবর দেখিস নাই তুই?'—

 ‘তারপর আবার বলেছিল বলদেও 'লড়াইটা নাকি এইবার হামাদের দিকেও চলে আসবে, দাসবাবু বলেছে হামাদেরও টিরেনচ খুঁড়তে হবে।’ কেশবলাল অবাক গলায়