হয় ‘কাম না কচু। সব ব্যাটাই নিমক হারাম।’
‘——পুয়ারে তো মানুষ করছত। আইজ আর বাড়ি আয় না। এই অয় বুঝলি?
—কী করি কও? পুয়া আমার বড়ো অইছে। মানুষ অইছে। তার কত কাম-কাজ ঈদের দিনও আইল না।
—কাম না কচু। সব ব্যাটাই নিমক হারাম।
—না মাই। আমার পুয়া মার লাগি বেহুস।
—অইচ্ছা পুয়ার লাগি বড়াই করতে অইত নায়। জানি জানি। সব কথাউ জানি। পুয়ায় তরে ভুলি গেছে। তার চকুত রঙ ধরছে।’ (নিজের সঙ্গে দেখা)
দুই ভাই গল্পকারের গল্প বলার আগে আর এক ভুবন বেড়িয়ে আসা যাক। আমাদের প্রতিবেশি বাংলার দ্বিতীয় ভুবনের লেখক হাসান আজিজুল হকের গল্পে উপভাষার শব্দ কেমন ব্রহ্মসমান বিদ্ধ করে আমাদের মর্ম। একটি মাত্র শব্দ এখানে তীর হয়ে ছুটেছে ‘নাইখো।’—
“...। বাচ্চা হয়েছিল তোর, তার কী হলো রে?
তার সেই নিচু কর্কশ গলায় সে বলে, ‘নাইখো’
কেন, কোথায় দিয়েছিস তাকে? কঠিন গলায় আমি বলি। আমার হঠাৎ রাগ হয়ে যায়।
কিছুমাত্র পরিবর্তন নেই তার মধ্যে। ঠিক আগের কথাটিই আবার বলে, নাইখো।
কোথায় কাকে দেয় সে সন্তান? দেবতাদের শাপমুক্ত করছে নাকি? আয়েশা ধীর পায়ে গাছতলার দিকে ফিরে যায়।” (জননী)
শুভঙ্কর চন্দের ‘চরমানুষ’ গল্পের কথায় যাওয়ার আগে আয়েশার কথা বলে নেওয়া গেল। মরিয়ম বিবির গল্প আয়েশার সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। মরিয়মের হাহাকারের সাথে আয়েশার দুঃখ একাকার করা যায় না। উপরের কথা অংশে ‘নাইখো’ যদি শব্দের চরম হয় তবে ‘পকেটমারের কিচ্চা ইতা হুদা মিছা’ কথার শীর্ষ।—
‘অনেকবার সাহস সঞ্চয় করিয়া আবার ভীত হইয়া পড়িয়া একসময় দুম করিয়া শামাদ বলিয়া ফেলিল: ‘তুমি আইচ্ছা কইলেউ যাইব।’ মরিয়ম প্রথমে কথাটা বুঝিল না। কিন্তু হঠাৎ একেবারে লাফ মারিয়া মাচাং এ উঠিয়া বসিয়া কহিল: যায়। ‘মানে?’ শামাদও ততক্ষণে উঠিয়া বসিয়াছে। সন্ত্রস্ত সতর্ক গলায় বলিতে লাগিল— ‘ঔষদ পন্র টেকা, খাওয়া পাঁচ টেকা, আর আড়াই টেকায় বাইচ্চাটার গঞ্জি একটা, আড়াই টেকা মালিকর বিবিরে দিয়াইছি, বেটিরে কাইল সকালে একটু দেখত খাইবার দিত এর লাগি.... পকেটমারের কিচ্ছা ইতা হুদা মিছা।’ (চর-মানুষ)
তপোধীর ভট্টাচার্যর গল্পবিষয়ক বিখ্যাত প্রবন্ধের প্রধান অংশ জুড়ে আছে অভিজিৎ সেন এর ‘মাছ’ গল্প। পশ্চিম বাংলারই ভৌগোলিক বিভাগ উত্তরবঙ্গের লেখক অভিজিৎ সেন এর ‘রহু চণ্ডালের হাড়’ মূলহীন মানুষের মূলে যাওয়ার, বেঁচে থাকার লড়াই-এর