পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১২৬ ইতিহাস। নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনার অন্যতম। তবে ‘মাছ' গল্পে যে লড়াই-এর কথা বলেছেন প্রবন্ধকার, সে-সত্যকে মেনে নিয়েও বরাক উপত্যকার গল্পকার তীর্থঙ্কর চন্দ'র গল্প ‘ছমছু মিয়ার মাছ’কেও লড়াই এবং কথাবয়নের সার্থকতায়, সমসাময়িকতার দৃষ্টান্তে, পংক্তি থেকে দূরে রাখার মতো নয়—এ সত্য মনে করিয়ে দিতেই উদ্ধৃতি— 'দু-জনেই জালের দু-দিকে দাঁড়িয়ে মাছগুলোকে ধরে খলইতে রাখে। জীবনের স্বাদ। ‘মাছ লামিতরারে। ছুবে জাল ফালাও। খলই-এর ভেতরে মাছগুলি লাফায় । ছমছু ভাবে কোনটা আগে আনবে। ‘পানী’র কাপড় খুব দরকার। ... দুই তিন দিন খালেকর তশলাদি চালানি যাইব। হিতার পাক অইলে তেউ পাক করা অউত্য। আর ‘আল্লায় অলা পাঁচ দশ খেও মাছ দিলে হাবুইতা অইব।' নিজের মনকে নিজেই বোঝায় ছমছু। এবার নেশাটা জমছে। মাছ জালে না পড়লে নেশার ঘনত্ব কমতে থাকে। লি তুল'। চার-পাঁচটা ‘ঘুড়া' আর চার-পাঁচটা 'লাচর বাচ্চাইন'। সত্যি মাছ 'লামের'। আলিম মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয়। ‘কানর দুল' কালই কিনবে। “শিলচর বেজান দাম'।' (ছমছু মিয়ার মাছ) আর এক প্রধান গল্পকারের একই বিষয়ের উপর রচিত গল্পাংশতে দৃষ্টি দিতে হচ্ছে দুটি কারণে। এক বিষয়, এতেও মাছ এবং বরাক উপত্যকার গল্পের গ্রামীণ সম্পদ যেমন চা বাগান তেমনি তার মাছ তার হাওর আর 'মাইমল'। 'মাইমল'দের ব্যবহৃত উপভাষা। দেবব্রত চৌধুরির গল্পের উপাদান কদাচিৎ সখের শহর। 'বুড়ো হাজিম আপশোষ করে 'ধূর এমনটা জাইনলে আইজকা ঘরথ্যা বারাইতাম না।' আপশোষ নীলকণ্ঠেরও, কিন্তু সে হতাশ নয়। জলের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে 'খাড়অও হাজু ভাই, বড়ো মাছ আইজকা লাগাইমুই, নাওখান বার কইরা হাওরের মুখো নেওন লাগে।' দুধনাথের ভয়টা এখনও কাটেনি। আমতা আমতা করে বলে, হিয়ানদা জলর টান যে বড়ো জব্বর গো নীলুদা।' নীলকণ্ঠ এবারে ক্ষেপে যায়, 'জানের অত দরদ তোর আইল ক্যারে, যা ঘরো মার বুক চুষগা যা'। (চোরাঘূর্ণি কথার পিঠ চেপে কথা আসে। দেবব্রত চৌধুরি বরাকপারের কথাকার আর আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাংলার দ্বিতীয় ভুবনের শ্রেষ্ঠ লেখক। ইলিয়াস বাংলাদেশের প্রতিটি উপভাষায় সমান দক্ষ। সংলাপ রচনার জাদুও তার করায়ত্ত। উপভাষার সঠিক উচ্চারণে ধ্বনিতত্ত্বকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেন, 'গোলজার' বানানের শুদ্ধতায় গুলজারকে হারিয়ে দেয়। দেবব্রত চৌধুরির গল্পের উদ্ধৃতাংশের শেষ কথাটি কেমন অবিকল ইলিয়াসের গল্পাংশে এসে গেছে। ইলিয়াস একটু উচ্চকিত, দেবব্রত তেড়েফুঁড়ে না