পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনিশে মে : ভাষার সংকট ০ ১২৭ হোক দারুণভাবে তো বেরিয়ে এলেন। ইলিয়াসের গল্পাংশ— দেই। “ল, গঙ্গাজলিটার মইদ্যে একটা পাক দিয়া যাই। আউজকা তরে বউনি করাইয়া 'না ওস্তাদ।' —তে চল, এ্যাম্বে বইয়া থাকবি, এক বোতল মাল টানবি, আমি কাম সাইরা বারাইয়া আহুম চল।' 'না ওস্তাদ।' ‘যা ঘরে গিয়া বউয়ের বুনি চোষ গিয়া।' আসাদুল্লা চটে যায়। “তরে মানুষ করতে পারলাম না গোলজার।' (তারাবিবির মরদপোলা) পাঁচ উদ্ধৃতির পর উদ্ধৃতি সাজিয়ে কী পরিচয় হলো, পাঠককে লেখক সাজিয়ে সে জবাব চাওয়া যায়। উত্তর একবাক্যই হবে, উপভাষার ব্যবহার যথেষ্ট এবং সার্থক বরাকভূমিতে। সমস্যা মিটল কি। সমস্যা তার অবস্থানেই স্থির আছে। পশ্চিমবাংলা, বাংলাদেশ আর বরাক উপত্যকার ত্রয়ী অবস্থানকে পৃথক করে দেখা, অভিমানেরই নামান্তর। আমরা অন্য কোনো কারণে বাংলার মূল ভাষা-অ্যারিনার ঢুকতে পারছি না। বা শূন্যমূল বয়নভাবনা আমাদের কথাকে ভিত দিতে পারছে না। হয়তো কথা রচনায় সাধারণ তত্ত্বভাবনার অভাব রয়েছে। উপভাষার ব্যবহারে বিকল্প বাস্তবের বীজতলি তৈরি করতে বিকল্পবয়ন-ভাবনাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। পথও ঠিক হয়ে আছে, মানুষের মুখের কথা, ভাষাই হবে তার কথা রচনার কথা। মানুষের ভাষা, মানুষের মুখের কথাকে যেমন শুনছি যেমন দেখছি বয়নে নিয়ে আসছি বলেই হয়তো বাস্তবতা থেকে দূরে থাকছে আমাদের কথা-রচনা। বিকল্প-বাস্তবকে ছুঁতে গিয়েও অধরা থাকছে। পাঠক নিজেকে চিনতে পারবে আভাসে, চেনা আধো চেনা এক আলো-আঁধারির বিশ্বস্ত অপর বাস্তবতায় নিমগ্ন হবে পাঠক। লেখকের মধ্যস্থতায় সঠিক বাস্তব বিকল্প পাঠে সময় হারানো বিশ্বময়তায় পরিব্যাপ্ত হবে। তাই, বরাক উপত্যকার কথাসাহিত্যে উপভাষা ব্যবহারে সার্থক হয়েও সঠিক পাঠকৃতি, বয়নের অন্তর্গত আপাত-পাঠ থেকে প্রকৃত-পাঠে উত্তরণ, নির্মাণ-অতিরিক্ত মাত্রা-সংকেত বা কৃৎকৌশলগত পটুত্ব। সমস্যাহীনতা থেকেও যেসব সংকটের আভাস পাওয়া গেল তা নিরসনের একমাত্র উপায় আমার প্রাথমিক প্রস্তাবেই নিহিত রয়েছে। লেখক-পাঠক সম্পর্কের নিবিড়তা আর মানুষের কথা কথনের নব্যভাষা দিয়ে বাস্তবকে নতুনত্ব দেওয়া, যা আছে সেও যেমন সত্য, তেমনি সত্যকে সত্যের অধিকে নিয়ে যাওয়াতেই শব্দকঙ্কালে রূপারোপের একমাত্র উপায় । তীব্র কুঠার ১৯৯৫।