পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ১৪

 প্রতিরোধ প্রক্রিয়াও চলছে। ভাষা শহিদের রক্তে তাই বারবার সিক্ত হচ্ছে পুণ্যভূমি। ১৯৭২-এ বাচ্চু চক্রবর্তী আর ১৯৮৬-তে জিসু-জগনকে শহিদ হতে হয়েছে।

 ১৯৬১-র উনিশে মে-র গুলিচালনায় একাদশ শহিদের মৃত্যুবরণ এবং অসংখ্য আহতদের দুর্দশার কারণ অনুসন্ধানকারী তদন্ত কমিশনের রায় এখনও প্রকাশিত হয়নি পঞ্চাশ বছর হয়ে গেলেও। সেদিনের কিশোর গণতন্ত্র তো এখন চৌষট্টি বছরের প্রৌঢ়। ভারতবর্ষে বাংলা ও বাঙালি এখন উপেক্ষিত। দক্ষিণ ভারতে দক্ষিণী ভাষা ছাড়া অন্য ভাষায় লেখা হয় না সাইনবোর্ড কিংবা বাসের গন্তব্য। সাহিত্য অ্যাকাডেমির সভাপতি দোকানে দোকানে ঘুরেও বাংলায় লেখাতে পারেননি পশ্চিমবাংলার রাজধানী শহরের কোনো সাইনবোর্ড। কেন পারলেন না। এই কেন প্রশ্নের ওপারে নিশ্চয়ই আছে বাংলা ও বাঙালির দুর্দশাকামী কোনো শত্রু। চিহ্নিত করার সময় কি এখনও আসেনি। ‘পানিত ছেদ মারলে হাঁটুত পড়ে’, বাঙালির শত্রু তো আর বাইরের কেউ নয়। নিজের ক্ষতি নিজে না করলে, কার সে ক্ষমতা করে দেশভাগ, করে টুকরো টুকরো। যা হয়েছে তা নিয়ে ভাবতে বসলে ভূগোল পাল্টাবে না। জুড়ে যাবে না আবার। মনের ভূগোল পাল্টাতে তাই বার বার কামনা করা যায়, পুণ্য হোক, পুণ্য হোক এবং এক হোক বাঙালির মন।

 সব শেষে যে কথা বলার, বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার অর্থ কিন্তু অন্য ভাষার বৈরিতা নয়। সমৃদ্ধ অসমিয়ার মতো প্রতিবেশি পেয়ে বাংলাও চায় আরও বিকশিত হয়ে উঠতে। চায় ছোটো ছোটো ভাষাগোষ্ঠীর শ্রীবৃদ্ধি, যেন কেউ হারিয়ে না—যায় অনাদরে। বরাক উপত্যকার বহুভাষিক চরিত্রকে একবৃত্তে গেঁথে রাখার দায়িত্বও প্রধান ভাষা বাংলার। কারণ ১৯শে মে-র সংগ্রাম শুধু বাঙালির ছিল না। বাংলাভাষাকে ঘিরে আমাদের সবার সংগ্রাম ছিল। তাই সকল ভাষার অগ্রগতির মধ্যেই নিহিত আছে আবহমান বাংলা তথা অখণ্ড বাংলাভাষার চেতনা।

আরম্ভ মে ২০১২