পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে: বাঙালি চেতনার নবোন্মেষ

এখন আজাদির কথা বললে দেশদ্রোহী হয়, তিহাড়ের খোঁয়াড়ে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, আত্মহত্যার প্ররোচনায় মেরে ফেলা হয় কৃতি ছাত্রকে। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে তার স্বগৃহে হত্যা করা হয়। এদের অপরাধ একটাই, ‘এরা চেয়েছে ওদের ব্যক্তিত্বের পূর্ণ প্রকাশোপযোগী আজাদি’। কী আশ্চর্য পরিহাসের বিষয় যে ওদের চাওয়ার কথায় মৌলিকতা কোথাও কিছু নেই যে ভয় ধরিয়ে দেবে শাসকের মনে বরং নাগরিকের মৌলিক অধিকারের কথাই ওরা বলেছে, স্বতোৎসারে উচ্চারিত হয়েছে যৌথভাবে। ভারত ঐতিহ্যের এক কাব্যগ্রন্থের পঙক্তি কথাও হয়তো উচ্চারিত হয়েছিল তাদের সমবায়ী বক্তব্যে, তারা বলেছে মানুষের নিত্য কর্মাচরণের অধিকারে গ্লানি ধরা পড়লেই আমাদের অভ্যুত্থান, আমাদের লড়াই স্বাধীনতার স্বপক্ষে। তারা চেয়েছে শিকল ভাঙ্গতে, মহামতি রুশোর কথা মিথ্যা প্রমাণিত করতে, 'মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায় কিন্তু সর্বত্রই সে শৃঙ্খলিত'। শেকল ভাঙার গান ওদের সহ্য হয় নি। এখন এক ধূসর সময়ে আমাদের বাস, মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ হচ্ছে রাজ্যে রাজ্যে কেন্দ্রে বরাক উপত্যকায় তথা আসাম রাজ্যেও।

 নমামি ব্রহ্মপুত্র না বললে এখন আসামের বাঙালিকে ভেসে বেড়াতে হয় রাষ্ট্রহীন ১৮৭৬ এর প্রথম বঙ্গভঙ্গ যে বাঙালি জনগোষ্ঠীকে বাংলার রাষ্ট্রসীমা থেকে নির্বাস দেওয়া হয়েছিল, সেই বাঙালির বৃহদংশকে এখন খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে এক পরাক্রমী রাষ্ট্রশক্তি তার প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থার ভয় দেখানো সঙ্গিন উঁচিয়ে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে বাঙালি-শূন্য করার চক্রান্ত শুরু হয়েছে যেদিন থেকে বেঙ্গল রেসিডেন্সি থেকে ছিন্ন করে নবার্জিত আসামের সঙ্গে যুক্ত করা হয় সিলেট কাছাড় গোয়ালপাড়াকে। স্বাধীনতার গন্ধ পেয়ে অসমিয়া উগ্রজাতীয়তাবাদ আবার আগ্রাসী হয়ে ওঠে, নইলে কেন তৎকালীন আসামের প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈর গোঁসা হয়। কেন তিনি সিলেট রেফারেণ্ডামের সপক্ষে চক্রান্ত করেন, কারণ বাঙালি নাকি গৌহাটি হাইকোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধক হয়েছিল, নাকি জিন্নার চোখ থেকে গোটা আসামকে পাকিস্তান হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে পণ্ডিতের অর্দ্ধত্যাগ। এখন সংকটের সময় ওসব প্রশ্ন উঠেছে নতুন করে প্রফুল্ল-ভৃগু-সমুজ্জ্বলের গোঁসা ধরিয়ে দেওয়ার জন্য। নাকি আর এক শিশুনায়ক রাজীব গান্ধির পাকা ধানে কোনো বাঙালি ম‍ই দিয়েছিল বলে, শোনা যায় তখন এক বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন।