পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ১৬

এসব আষাঢ় মাসের গল্পের সঙ্গে আর এক বিভ্রান্তির অপপ্রচার বাঙালি নাকি আসামকে অসম বা অহম বলে না। কেন বলে না, কলকাতার কাগজপত্র তো বলে, নইলে ব্যবসা বন্ধ, পিছিয়ে পড়তে হয়। এদেশের নাম যদি ফিলাডেলফিয়া কিংবা ফরাশি রিভিয়েরা হয় তাতেই বা কী আসে যায় নির্যাতিত বাঙালির। আসামে 'এনআরসি'র নামে বাঙালি বিতাড়নের প্রহসন তো বন্ধ হয় না। ভারতের কোন রাজ্যে রাষ্ট্রীয় নাগরিকপঞ্জি বা ন্যাশনেল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স এর নামে স্বদেশবাসীকেই হেনস্তা করা হয়েছে। আসলে এসব দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য, ডিটেনশন ক্যাম্প ভরিয়ে দেওয়ার জন্য, লিগ্যাসি ডাটা খুঁজে না পেয়ে আত্মহত্যার সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিকে ভয় দেখিয়ে কোলে টানার প্রক্রিয়া। হিন্দি-হিন্দু-হিন্দুত্ব যেমন এক প্রক্রিয়া তেমনি অসমিয়াত্বও। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ এর বাঙালিরা যেমন উত্তর-পূর্বের বাঙালির কথায় বিশেষ শ্বাসাঘাত প্রবণতার জন্য তাকে অসমিয়া বলে থাকেন, তেমনি অসমিয়াদেরও বিশ্বাস ও অপপ্রচার যে উত্তর-পূর্বের বাঙালিরা মূলত অসমিয়া, তাই ফিরে এসো। নাম লেখাও অসমিয়ায়, সাত খুন মাপের একটা নবচক্রান্তের ধুয়ো তুলেছে নেতা মন্ত্রীরা। তাই বরাক উপত্যকার বাঙালি প্রধান এলাকায় শুরু হচ্ছে অসমিয়া গান আর সত্রীয়া নাচের উৎসব। হচ্ছে ব্যাণ্ড উৎসব। কলকাতার নামীদামী শিল্পীরা গিয়ে দামি টিকিটের বিনিময়ে করে এলেন উনিশে মে উৎসবও। একুশে ফেব্রুয়ারি কিন্তু কোনো আনন্দ উৎসবের রূপ নেয় না বাংলাদেশে, শহিদ দিবসে কিসের উৎসব। এসব কী হচ্ছে তবে, না'বরাক উপত্যকা তথা উত্তরপূর্বের বাঙালি জানে এসব চক্রান্তের শিকড় কোন জাতীয়তার উগ্রভূমি থেকে উত্থিত। এসব আসলে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা।

 এমতাবস্থায় বেশি কথা বলার সময় নেই উত্তর-পূর্বের বাঙালির। বিকল্পও কম। অসমিয়া হয়ে যাওয়ার টোপটাও তো মুখের কথা, একদিনে হওয়া সম্ভব নয়, এ তো আর ধর্মান্তরণ নয়। ব্রহ্মপুত্রের চর অঞ্চলের বাঙালি মুসলমান ভিটেমাটি বাঁচাতে গ্রাসাচ্ছাদনের লোভে নিজেদের অসমিয়া লিখিয়ে হয়েছিল নতুন অসমিয়া। তারাই একসময় আক্রমণের মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়, বাঙালি ভোলেনি নেলির গণহত্যা। এছাড়া দ্বিতীয় উপায় আছে স্বেচ্ছায় আসাম ছেড়ে যাওয়া, উত্তরপূর্ব থেকে নির্বাসিত হওয়া, কিন্তু কোথায় যাওয়া। আর তৃতীয়, মৃত্যু বেছে নেওয়া রাষ্ট্রীয় খোঁয়াড়ে, যার নাম ডিটেনশন ক্যাম্প। ইহুদিদের যেমন ছিল নাজি জমানায় ইউরোপ জুড়ে। আর খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে শেষ উপায় প্রতিরোধ। শ্রদ্ধেয় আহমেদ শরীফ বাংলাদেশের হিন্দুদের ভিটে ছেড়ে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন একসময়, পড়ে পড়ে মার না খাওয়ার কথা বলেছিলেন। তিনি তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন গল্পচ্ছলে। কলকাতার বাগবাজারে বন্ধুর বাড়িতে নৈশাহার সেরে ফিরতে একটু রাত হয়ে যায়। ট্যাক্সিওলা এত রাতে রাজাবাজার যেতে রাজি নয়। তিনি বললেন সংখ্যালঘুর প্রতিরোধ এরকমও