পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ১৭

হয়। তাহলে কী করা, রাষ্ট্রশক্তি যখন তার সমুদয় স্তম্ভ উপড়ে নিয়ে এসে আঘাত করতে চাইছে তখন আর কেন আইন মান্য করা। জাতির পিতাও তো অমান্যের বিধান দিয়েছেন। তাহলে কেন লিগ্যাসি ডাটার পিছনে ছোটা, পিতামহ মাতামহ উর্দ্ধতন পুরুষ নারী কখন আসাম দেশে ছিলেন তার নথিপত্রের নাম উত্তরাধিকার তথ্য বা লিগ্যাসি ডাটা। বংশ বৃক্ষ সাজিয়ে দিতে হবে তবে মানবে দেশবাসী। এত সহজে নিশ্চিত হওয়া যায় না, ছল যেখানে অস্ত্র, নবীন ছল পুরনো দুরভিসন্ধি সরিয়ে প্রকট হবেই হবে, বলবে তোর ঠাকুরদাদা জল ঘোলা... ইত্যাদি। তপোধীর ভট্টাচার্য এখন আর জল ঘোলা করার পুরনো উপমায় বিশ্বাসী নন, তিনি বলেন,

 ‘হিটলারের প্রেতাত্মা ভর করেছে রাষ্ট্রীয় শাসকবর্গের উপর, তারা আজ অন্ধ সেজে বসে আছে, যেন অন্ধতার মড়ক লেগেছে সর্বত্র। নাগাল্যাণ্ডে মাত্র কিছুদিন আগে উন্মত্ত নাগা জনতা একজন বাঙালি মুসলমান কে জেলখানা থেকে বের করে প্রকাশ্য দিবালোকে পৈশাচিক ভাবে হত্যা করেছে...’

 ‘উত্তর-পূর্বের প্রতিটি রাজ্যেই এখন এরকম ঘটতে থাকবে। এদের পথ প্রদর্শক তো অসমিয়া আগ্রাসনবাদ যারা গণতন্ত্রকে প্রহসনে রূপান্তরিত করে দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও শস্যের মধ্যেও ভূত ঢুকিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এবং ভারতের অন্যত্র কজন বুদ্ধিজীবী জানেন যে আসামের পুলিশও গেস্টাপো বাহিনীর মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে অসহায় বাঙালিদের উপর। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সহ প্রভাবশালী মন্ত্রীরা চোরকে বলেছেন চুরি করো আর গৃহস্থকে বলেছেন সজাগ থাকো। এবং এরাই হিটলারের কুখ্যাততম ‘অউশহ্বিৎস’ বা মৃত্যু শিবিরের অনুকরণে নানা জায়গায় বন্দি-শিবির গড়ে তুলেছেন যেখানে ১০২ বছরের বৃদ্ধ, পাঁচদিনের নবজাত শিশু সহ তরুণী মা এবং সব ধরণের বৈধ নথিপত্র থাকা সত্ত্বেও হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে অসহায়, মানুষদের ঠেলে দেওয়া হচ্ছে পশুর খোঁয়াড়ের ভিতর। রোম যখন পুড়ছিল, সম্রাট নিরো নাকি বেহালা বাজাচ্ছিলেন। আর আমাদের প্রাজ্ঞ বুদ্ধিজীবী বহু পুরস্কারে ধন্য লেখক কবিরা এই সময়ে কী করছেন। ওইসব 'ডিটেশন ক্যাম্প' ডাউটফুল ভোটার (ডি-ভোটার) তকমা দিয়ে যেসব বাঙালিকে কুখ্যাত অপরাধীর সঙ্গে খোঁয়াড়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে এরা কি 'অউশহ্বিৎস' এর নব্য ইহুদি নয়। এই ভারতবর্ষের জন্যই কি ক্ষুদিরাম বসু মাতঙ্গিনী হাজরা সহ হাজার হাজার বাঙালি আত্মত্যাগ করেছিলেন। বুদ্ধিজীবীরা কি 'আরণ্যক' এর ভানুমতীর মতো ‘ভারতবর্ষ কোনো দিকে’?—এই প্রশ্ন না তুলে কবি শান্তনু ঘোষের ভাষায় বলবেন ‘তুমি ক্রেডেলে রেখোনা হাত, পাশ ফিরে শোও’।

 পাশ ফিরে শোয়ার সময় এখন নয়। বুদ্ধিজীবীদের বের করে আনতে হবে অতিবুদ্ধির বৃত্ত থেকে। কারণ ইহুদিকেও এখন কেউ ইহুদি বলে না। ওদেরও রাষ্ট্র আছে। অ্যাক্সোডাস থেকে অমিয়ভূষণ, আমরা শুনেছি প্রব্রজনের গল্প। উত্তর-পূর্বের বাঙালিও পাবে তার রাষ্ট্র এই ভারতে। দলিত বাঙালি বলে কেউ কেউ খণ্ড করছেন বাঙালির, আর কত খণ্ড