পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ১৮

হবে বাঙালির। এক এক টুকরো বাঙালি আছে কর্ণাটকে মহারাষ্ট্রে দণ্ডকবনে ঝাড়খণ্ডে বিহারে, ওরা প্রতিস্থাপিত হয়েছেন নেহেরু স্যারের সৌজন্যে, বাংলা নায়কদেরই বা বাদ দেব কেন। ওরা পারতেন না একখণ্ড ভূমিতে স্থাপিত করতে তাঁদের পাপে বিতাড়িত বাঙালিকে। যারা আন্দামান টান্দামানে গেলেন তাঁদের সবাইকে কি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে সম্মানের। হয়নি, থাকতে দেওয়া হয়েছে শুধু। হলোকাস্টের জন্য বাঙালিকে কাঁঠাল পাতা খাইয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। আর এখন ভান হচ্ছে যেন ঘুম ভেঙেছে, নবীন এই ধর্মীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার উলঙ্গ রাজা বেহালা বাজাচ্ছেন অ্যারোপ্লেনে আর বাঙালির দহনকাণ্ডের নীল নক্সা সাজাচ্ছেন। তাই বরাক উপত্যকার বাঙালির, উত্তর-পূর্বের বাঙালির অন্য অপশন নেই, তাকে জোট বাঁধতেই হবে। গোমাংসের রাজনীতি যেমন বর্জন করেছে উত্তর-পূর্বদেশ তেমনি এনআরসি প্রহসনকেও প্রতিরোধ করবে বাঙালির যৌথ নেতৃত্ব। আর প্রতিরোধের জন্যও চাই স্বপ্নসঞ্চয়, বাংলার বাউলের গানকে সম্পদ করেই এগোতে হবে। আগের সুন্দর দিন ফিরিয়ে আনতে হবে।

 সেদিন ফেসবুকে একজন প্রশ্ন করলেন বাংলায় কোন গ্রন্থের আদিপর্ব আছে পরের পর্বগুলি নেই। উত্তর সবার জানা, নীহাররঞ্জন রায় এর বাঙালির ইতিহাস আদিপর্ব। আদি আছে, মধ্য নেই, উত্তরপর্ব রচনার বাসনা তো তাঁর কোনোকালেই ছিল না, স্বীকার করেছেন নীহাররঞ্জন। মধ্যপর্ব লেখাটা কি এতই সহজ, তিনি যতই স্পষ্ট ভাষায় বলুন ভাষাজ্ঞানের অক্ষমতাই কারণ। ফারসি পর্তুগীজ ওলন্দাজ জানা দরকার, ইংরেজি না হয় বাঙালির দ্বিতীয় ভাষা। কারণ এইসব বিচিত্র ভাষার দূরদেশী অভিযাত্রীদের বাংলায় অনুপ্রবেশ ঘটেছে মধ্যপর্বে। আর ওই পর্বেই বাংলার মুখের ভাষা পাল্টে পাল্টে গেছে, খাদ্যাভাস পাল্টেছে, আন্দিজ পর্বতের আলু পেঁয়াজ এসেছে, ওই সময় কিছু ডালও এসেছে বাঙালির রান্নাঘরে, নইলে মুসুরি কেন আমিষ হয়। ইউরোপীয়রা সাগর নদী শাসন করতে জানত। আরবরা আর আধা আরব ফারসিরা স্থল নৌকো দুটোতেই পটু। ইসলামের ধর্মীয় ভাষা যদি হয় আরবি, জ্ঞানের ভাষা ছিল ফারসি। সেই আদিকালে আলেকজাণ্ডার ছাড়া রণধারাবাহী সবাই ফারসি সাম্রাজ্যের কোনো না কোনো তালুক থেকে এসেছে। মোগলরাও তাই। স্বাভাবিক কারণেই মুসলমানরা নিয়ে আসে ফারসির সমৃদ্ধ ভাষা। বনিক প্রযুক্তিবিদ ও চিকিৎসক ওলন্দাজ পর্তুগীজ ও ইংরেজের মুখের ভাষাও ফারসির সঙ্গে বাঙালির মুখের ভাষায় মিশে যায়। শুধু লুণ্ঠন-পারগ ছিল না ওইসব অতিথিরা। বাঙালি জীবনে, বাংলার সমাজেও এক নবনির্মাণের কাণ্ডারি হয় ওরা। মুসলমান লুণ্ঠনের সঙ্গে ধর্মপ্রচারকেও প্রাধান্য দেয়, বিশেষ করে আকবর পরবর্তী মুঘল সম্রাটরা। ঔরঙ্গজেব এর আমলে তা হিংস্র রূপ নেয়। ইউরোপীয়রা এত সংগঠিত ভাবে আসে নি, ওরা মূলত বণিক ও জলদস্যু। ব্যবসা এবং ছোটোখাটো লুণ্ঠন নিয়েই সন্তুষ্ট ছিল। সংযত ছিল প্রাথমিক পর্যায়ে। অস্তমিত প্রায় মুসলমান গৌরবকে হাতিয়ার