পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ১৯

করে ওরা কৌশলে ক্ষমতালোভী হয়। ধর্মপ্রচার বিষয়ে রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার হয় বা দখল নেয়। তখন ধর্মতন্ত্রও পরিকল্পিত ভাবে ডানা মেলে বিশেষত দুর্গম আদিবাসি অঞ্চলে। এদিকে বাংলার কাবুলি নরপতি শেরশাহ সুরি থেকে সিরাজউদৌলা পর্যন্ত ইসলাম প্রচার অব্যাহত রয়েছে। ইউরোপীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনে আপাতদৃষ্টে এক স্থিতাবস্তার অবসান হয়। নীহাররঞ্জনবাবু আদিপর্বের পর এই সময়কালকে অন্ধকারে রেখে দিলেন কি অবিতর্কিত থাকতে। নাকি তাঁর জবানি মতো বয়সের ভারে লেখা হয়ে ওঠে নি। ভাষাশিক্ষার দোহাইও দিয়েছেন। ডাচ পর্তুগীজ ফার্সির মধ্যে একটা দুটো জানা না থাকায় পরিহার করলেন বাঙালির আত্মনির্মাণের ভিত্তিভূমি। আদিপর্বে তো কৌমতন্ত্র থেকে বৌদ্ধ এবং কর্ণাটকি সেন রাজবংশের হিন্দুতান্ত্রিক সমাজে হিন্দু ও বৌদ্ধ প্রাধান্যের লড়াই ছিল। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ও বাঙালি সমাজের আদিপর্বের এক কালখণ্ড নিয়ে তাঁর মতো সাজালেন বাংলার সামাজিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস। এত জটিলতা ছিল না সমাজ জীবনে তাই বর্তমান বাঙালি সমাজের সঙ্গে কোনো যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। তুঙ্গভদ্রার তীরে আর গৌড়মল্লার নাম পাল্টে একই ইতিহাসের এপিঠ ওপিঠ ভাবা যেতেই পারে। আসলে ইতিহাসের না বলা, না সাজানো পর্বকে লুণ্ঠনের কাল ধরে নেওয়া থেকেই হয়তো আদিপর্বের হিন্দু সমাজে বিধর্মী শাসকের প্রতি এক বিজাতীয় ক্রোধের জন্ম। ইতিহাসের স্বাভাবিক বিবর্তন পথ জানা থাকলে এই বিদ্বেষ থাকত না। মনে হত ওরাও তো এ ধরণীর আত্মীয় বন্ধু স্বদেশবাসী। ধর্মীয় গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে এত কলহ থাকত না। অনির্মিত সামাজিক ইতিহাস গঠনে শুধু বাংলা নয় গোটা ভারতভূমিরই প্রচণ্ড অনীহা। যা কিছু তৈরি হয়েছে তাতে সবাই নিজের ধর্মগোষ্ঠীর কোলে ঝোল টেনেছে। ব্যতিক্রমী থাপার হাবিব সরকারদের এখন পড়তেই দেওয়া হয় না। অধুনা লিখিত বাংলাদেশের অধিকাংশ ইতিহাস বইতে হিন্দু প্রাধান্য খর্ব করা হয়েছে, যেমন হচ্ছে ভারতবর্ষে উল্টোটা। কে বলবে তাহলে মধ্যপর্বের কথা, সঠিক মূল্যায়ন করবে বাঙালির হয়ে ওঠার সময়কাল। নানান রঙের ফুল দিয়ে সাজানো ড্রইং রুমের বাহারি ফুলদানিটা দেখার চোখ কবে মেলবে। আক্ষেপ করার সময় নেই বাঙালির। সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীরে মঙ্গলঘট ভরে রেখেছেন কবেই বাঙালির কবি। বাজিতপুরের জমিদার হলেও প্রকট কোনো বৈষম্য তখন দৃশ্যমান ছিল না তাঁর জমিদারির গ্রামে। কৃষক শ্রমিক কিংবা মেধাশ্রমিক যে যার মতো সৌহার্দ্যে বসবাস করেছে। হ্যাঁ রাজনীতির অধুনা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হয়তো ছিল না কিন্তু সুখ ছিল, বর্তমান গণতন্ত্রের নামে নিষ্পেষণ ছিল না। ধর্ম-কর্ম ছিল নিজের মতো, সে নিয়ে মাথা ব্যথা ছিল না হিন্দুতে মুসলমানে। একজাতি একপ্রাণ ছিল বাঙালি। বাঙালির মুখের ভাষাও তখন এক। জলপানি বিভেদ খুব ছিল না সিলেটে, সিলেটের গ্রামের প্রতিবেশি হিন্দুরাও পানিই বলত। বিশ্বযুদ্ধ শেষ হতেই যখন দর কষাকষির দুয়ার খুলল তখনই ঘোলাজলে মাছ ধরার জন্য পশ্চিম ভারত থেকে দ্বিজাতিতত্ত্বের