পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ২১

বাঙালি জীবনের মিসিং লিঙ্কটা অধরাও নয়, কিন্তু কেউ তাকে সাজানোর চেষ্টাই করলেন না, বললেন বাঙালি আত্মবিস্মৃত জাতি। সাজালে যদি কোনো পক্ষের কোলে ঝোল বেশি পড়ে, গেল গেল হলেই লঙ্কাকাণ্ড কারবালার যুদ্ধ। সমাজকে বিভাজিত করার পুরনো খেলা খেলতে দেওয়া হোক, লুটেপুটে খাক। ইদানীং আবার সোশ্যাল মিডিয়ায় অশিক্ষিত জনমতে তৈরি হচ্ছে বাঙালির খিচুড়ি ইতিহাস। সে কেমন কেউ বলতে পারবে না, অন্ধের হস্তীদর্শনে তবু হাতিটা ছিল স্থির। মোদ্দা কথা দিনের শেষে হিন্দু মুসলমানে বিভাজিত হচ্ছে সকল শুভ প্রচেষ্টা। শাসক শ্রেণি জানে কী করে হনুমানের ল্যাজে আগুন দিতে হয়। আসামের এই বিশাল বাঙালি জনগোষ্ঠীকে কী করে সামাল দিতে হয়। মোট জনসংখ্যার ত্রিশ শতাংশ হবে বাঙালি, জনা চল্লিশেক বিধায়ক নির্বাচনে নির্ণায়ক শক্তি। তাও বিধানসভায় বাঙালি বিধায়ক অসমিয়ায় শপথ নেয়। বাঙালি হয় না, আপৎকালেও বাঙালি এক হয় না, হয় সংস্কৃতমূলের হিন্দু বাঙালি নয় আরবিমূলের মুসলমান। এই বাঙালি কিন্তু আসল বাঙালি নয়, এদেরও দুইরূপ। এক জেনে, অন্য না জেনে জো হুজুর। প্রথম জন নগদ বিদায়ে বিশ্বাস করে এরা রাজনীতির কারবারি, আর অন্যপক্ষ বোড়ে বাঙালি, রাজনৈতিক বশ্যতার নজরানা দেয় জো হুজুর বলে। মধ্যবিত্ত আর বুদ্ধিজীবী বাঙালির হিন্দু মুসলমান নিয়ে সমস্যা নেই, বন্ধুত্ব থাকে গলায় গলায়। শুধু স্বার্থান্বেষীদের প্রয়োজনে ধর্মপ্রাণ বাঙালি ব্যবহৃত হয় গোমাংস রাজনীতিতে।

 বাঙালির ইতিহাস কিন্তু অসহিষ্ণুতার কথা বলে না। বাঙালি খুব একটা যুদ্ধ বিগ্রহও জানে না, হেরে ভূত হয়ে যায় শশাঙ্কদেব এর মতো। আদিপর্বের ইতিহাস তো তাই বলে। তাই ইতিহাসের অন্ধকার থেকে এক লাফে আসাম এনআরসি তে পৌঁছে যায় বাঙালি। মাঝখানে দেশভাগ নামক এক আদিপাপের বোঝা টেনে চলেছে খণ্ডিত বাঙালি এই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, আসাম রাজ্যে। আশার কথাও যে নেই তাও নয়। রক্তঋণে অর্জিত হল অনেক কিছু বাঙালির, ওপারের বাঙালি যখন পূর্ব পাকিস্তানি তখন হল ভাষা আন্দোলন, হল মুক্তিযুদ্ধ। নবীন রাষ্ট্র তো বেশ ভালই কাটছিল, ‘নওযোয়ান, হিন্দু মুসলমান'। চলতে চলতে থমকে গেল ইসলামি জাতিতত্ত্ব হাতিয়ার করে এক সামরিক শাসক জাতিধর্ম বহির্ভূতদের তাড়াতে শুরু করে। একই কণ্ঠস্বরে পূর্বতন সামরিক শাসকের বিধবাও নিদান হাঁকেন, মুক্তিযুদ্ধের নায়কের কন্যাও একই ফাঁদে পা দিলেন। পঁয়ত্রিশ শতাংশ অমুসলমান বাঙালি কমে কমে এখন আট। এরা কোথায় যায়, কিছু পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে। কাঁটাতারে ঘেরা ত্রিপুরা ও আসামের দুই নদী উপত্যকায় কি। এদের কী পরিচয়, বিশ্বরাজনীতিতে শরণার্থীর বিশেষ মর্যাদা থাকে। আসাম দেশে তা নেই, দেশ ভাগের যন্ত্রী নায়কের দৌহিত্র করেন এক উদ্ভট চুক্তি ১৯৮৫ র স্বাধীনতা দিবসে। বলা হয় স্বাধীনতার পরে আসা আসামের সব বাঙালি বিদেশি, যেহেতু নাগরিকপঞ্জী হয় ১৯৫১ তে তাই ওটাই ভিত্তিবর্ষ। তাদের প্রমাণ