পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ২২

করতে হবে তারা বিদেশি নয় তাহলেই মিলবে চিট কাগজ, নাগরিকত্বের শংসাপত্র। কোনো কোনো বাঙালি বুদ্ধিজীবী চাপলুসি করে বলেছেন, এসব কোনো চক্রান্ত নয়, ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জীও তৈরি হচ্ছে। এটা সর্বভারতীয় পঞ্জি, আসামের নয় শুধু। ১৯৫১ এর পর এবার হচ্ছে, আসাম দিয়ে শুরু। এই জনগণনায় কিছু বিশেষ শর্ত থাকবে নাগরিকত্বের এবং তা তদারকি করবে কেন্দ্রীয় সরকার, আসাম সরকার সর্বোচ্চ আদালত ও একটি ছাত্র সংগঠন। সুপ্রিম কোর্টের দুজন বিচারপতি থাকবেন তত্ত্বাবধায়ক। এর জন্য কত আনুষঙ্গিক কর্মকাণ্ড হল। বিদেশি ট্রাইব্যুনেল হল, সীমান্তে নিয়োজিত হল আসাম পুলিশ। মোতায়েন হল অসমিয়াভাষী পুলিশ, বাঙালি হলে চলবে না। সন্দেহবশে ধরে ধরে রাখা হবে ডিটেনশন ক্যাম্পে, নাৎসি জার্মানির কনসেণ্ট্রেশন ক্যাম্প এর আদলে। বিচারের প্রহসন হচ্ছে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে। করিমগঞ্জ জেলায় তেমন এক আদালত বয়কট করছেন উকিলরা বিচারকের বদলি চেয়ে। তাতেও বিচারের প্রক্রিয়া বন্ধ হয় না বিনা বিচারে, বিতাড়ন প্রক্রিয়া যে বন্ধ করা চলবে না কিছুতেই। সুপ্রিম কোর্টের ব্লা ব্লা ধারায় নির্দিষ্ট সময়ে প্রক্রিয়া শেষ করার বিধান দেওয়া আছে। শেষ করতে হবে এনআরসি, ন্যাশনেল রেজিস্টার অফ সিটিজেন্স তৈরি করতে হবে। এখন প্রশ্ন বাঙালিকে যে বিতাড়ন করা হবে, এরা যাবে কোথায়। প্রতিবেশি রাষ্ট্র কেন নেবে, তাহলে উপায়। উপায় আছে, জেলায় জেলায় তৈরি করা হচ্ছে ডিটেনশন ক্যাম্প। ধুবড়ি জেলায় হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ খোঁয়াড়। মানবাধিকার বলে কিছু থাকবে না যেখানে। সারাজীবন সসম্মানে শিক্ষকতা করে অবসর কাটানো বৃদ্ধ থেকে শ্রমিক কৃষক ও গৃহবধূদের নির্বিচারে পুরে দেওয়া হচ্ছে নির্যাতন শিবিরে।

 পরিতাপ এবং পরিহাসের ব্যাপার হল যেসব আইন প্রণেতারা এই বিতাড়নের আইন রক্ষায় সামিল হয়েছে তারাও কিন্তু এসব তথাকথিত বিদেশি কিংবা সন্দেহ ভোটারদের দ্বারাই নির্বাচিত। এরা রাজ্য মন্ত্রীসভার বাঙালি মন্ত্রী, এ-জমানার ও-জমানারও। এসব বাঙালি কালিদাসের দল নিজের ভোটারের নাম কাটায় উৎসাহী নগদ বিদায়ের লোভে। এখন প্রশ্ন, এই বিশাল সংখ্যক বাঙালি কেন প্রতিরোধে যাচ্ছে না, কাঁকড়াতন্ত্রের নিয়ম মেনে একে অপরকে পিছনে টানছে কেন। সেখানেই কি তবে নিয়মের রাজত্ব। দ্বিজাতিতত্ত্বের বিষময় প্রয়োগ। বরাক উপত্যকায় এই নাড়ির হিসাব চলছে। কামরূপে বাঙালি মুসলমান। নওগাঁ জেলায়ও তাই লামডিং এ ভিন্ন। এবার হোজাই শামিল। গোয়ালপাড়ায় ভিন্ন বাঙালি। ওখানে তো বাঙালি যারা বাড়িতে বাংলায় কথা বলে সামাজিক পরিচয়ে অসমিয়া, খাতায়পত্রেও নতুন অসমিয়া। এত আটঘাট বেঁধেও শেষরক্ষা হয় না। ভাগের কিল খেতেই হয়। এই হল জগার চাল ও ডালে বাঙালি খিচুড়ি। এই বিশাল বাঙালি সমাজ এক হতে পারে না বলে এনআরসি-র সাংবিধানিক শংসাপত্র পেতে এত ছলচাতুরি, আইনের বেআইনি প্যাঁচ।

 রুখে দাঁড়ানোর শক্তি নেই কে বলে, আসামের বাঙালি পরীক্ষা দিয়েছে, বিভাজনের