পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ২৩

রাজনীতিকে পরাস্ত করেছে বরাক উপত্যকা। ভোটের রাজনীতিতে ধর্মীয় এবং উগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তির সাময়িক উত্থানেও আশঙ্কার কিছু নেই। জাতি হিসেবে বাঙালি এতে একজোট হবে। অসমিয়া জাতিও হয়তো দেয়ালের লিখন পড়তে পারবে একসময়, এখন তাদের হীনবল হওয়ার পর্ব। কারণ নিছক ধর্মীয় আবেগ আর বাঙালি বিতাড়নের উগ্রজাতীয়তাবাদী আফিম খাইয়ে একটা জাতিকে বশীভূত রাখা যায় না, যাবে না। পাঁচ বছরের জন্য অ-বাক আসামকে উন্নয়নের মানচিত্রের বাইরে রাখা কোনো কাজের কথা নয়। ইত্যবসরে ছড়িয়ে থাকা বাঙালি ধর্মীয় পরিচয়ের ব্যক্তিগত পরিসরের বাইরে ভাষিক পরিচয়কে প্রধান করে বলীয়ান হয়ে উঠবেই। এবং একজাতি একপ্রাণ হয়ে বাঙালির ইতিহাসের উত্তরপর্বে পৌঁছে যাবে সরাসরি।

 বরাক উপত্যকার বাঙালি আসামের বাঙালি উত্তর-পূর্বের বাঙালির দুর্দশা কথার সাতকাহন শুরু করতে গিয়ে ১৮৭৬ এর প্রথম বঙ্গভঙ্গের উল্লেখ ছিল, ছিল উনিশে মের মহাবিস্ফোরণ এর কথা। সেই তো শুরু, পটভূমি না জানলে উপরোক্ত ব্যথার কথা শূন্যগর্ভ অপাঠ্য মনে হবে। তাই স্বল্প পরিসরে প্রত্যাশার উচ্চাশায় আপাতত প্রাপ্তির ঘরে শূন্য বসিয়ে শুনিয়ে দেওয়া যাক শুরুর কথা। ১৮৭৬ এ শ্রীহট্ট জেলাকে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য এবং অর্থনৈতিক ভাবে উদ্বৃত্ত জেলা হিসেবে আসাম প্রদেশের সঙ্গে জুড়ে দেয় বৃটিশ সরকার, বেঙ্গল রেসিডেন্সির ভাগ হয়। হয় প্রথম বঙ্গভঙ্গ। তারপর ১৯৪৭ এর জুলাই মাসে হয় গণভোট এবং ১২ জুলাই তার ফলাফলে সিলেটের পাকিস্তান ভুক্তি নির্ধারিত হয়। এতেও ছিল কারচুপি, ১৯৪৬ এ আসামের প্রধানমন্ত্রী গোপীনাথ বরদলৈ কংগ্রেস হাইকমাণ্ডকে জানিয়ে দেন সিলেট আর কাছাড়ের সমতল ভাগ বাংলার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়ার জন্য, উদ্দেশ্য মহৎ ছিল না কারণ পাকিস্তান প্রবক্তা মহম্মদ আলি জিন্নার মনে যে গোটা আসাম প্রদেশকে পাকিস্তানভুক্ত করার স্বপ্ন। সে খোয়াবকে খণ্ডিত করার প্রয়াসে তার এই সুপারিশ। গণভোটের ফল কিন্তু উল্টো হওয়ারই কথা, কিন্তু আবার চক্রান্ত এবং তৎকালীন সিলেটের তিন লক্ষ আদিবাসী হিন্দু চা শ্রমিককে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয় এই অজুহাতে যে তারা স্থানীয় অধিবাসী নয়। পাকিস্তানপন্থীরা জিতে যায় ৫৫,৫৭৮ ভোটের ব্যবধানে। তারও আগে ১৯৩৭ এ আসামের জাতীয়তাবাদী নেতারা বলেছিল তারা কংগ্রেসকে অকুণ্ঠ সমর্থন করবে একটি মাত্র শর্তে যদি সিলেট এবং কাছাড় জেলার সমতল ভাগ আসাম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে রাজি থাকে। তখন সেই রাজনৈতিক ও ভাষিক ভূভাগের পরিচিতি ছিল সুরমা উপত্যকা নামে, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বিপরীতে। কারণ সিলেট বিচ্ছিন্ন না হলে যে বাঙালি জনগোষ্ঠী আসামে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যায়। সেই শর্ত পালিত হয় গণভোটের সুচতুর চক্রান্তে। এদিকে সিলেটের কয়েকটি মহকুমা কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষ ভোট দেয়, এবং ১৫ই আগস্ট পর্যন্ত বিভ্রান্তি থাকে কে কোথায় যাবে তাই কিছু কিছু জায়গায় ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়,