পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ২৫

কার্যালয় উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারি পুলিশ এবং বিচারবিভাগে একচেটিয়া অসমিয়া ভাষীর নিয়োগে সরকারি প্রশাসন যন্ত্রের অসমীয়াকরণের পর ১৯৬০ এর এপ্রিল মাসে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটি অসমিয়াকে একমাত্র সরকারি ভাষারূপে স্বীকৃতি প্রদানের প্রস্তাব গ্রহন করে। তখন গোটা দেশের মতো আসামেও কংগ্রেসের একচ্ছত্র আধিপত্য। প্রায় বিরোধীশূন্য। বরাক উপত্যকার বেশির ভাগ সদস্যই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করলেও ধ্বনি ভোটে প্রস্তাব গৃহীত হয়। অসমিয়া জাতীয়তাবাদে একমাত্র ঘোষিত প্রতিপক্ষ যেহেতু বাঙালি এবং বাংলা ভাষার ভূত, তাই গৌহাটিতে আবার দাঙ্গা পরিস্থিতি, এক সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়। বারবার ঘুরে ফিরেই যার নাম হয় বঙ্গাল খেদা। পথে ঘাটে বাজারে বাঙালি দেখলেই শুরু হয় অত্যাচার। উচ্চশিক্ষায় আগত বাঙালি ছাত্ররা আক্রান্ত হয়ে বাড়ি ফিরতে বাধ্য হয় মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ায় ইতি টেনে। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিহাস ঘটে যায় বরাক উপত্যকার বদরপুর থেকে নির্বাচিত বিধায়কের হাত দিয়ে, যিনি ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নাজিরা বিধানসভা কেন্দ্রে পরাজিত হয়ে বাঙালির ভোটে বরাক উপত্যকার বদরপুর বিধানসভা ক্ষেত্র থেকে নির্বাচিত হয়ে থেকে যান আসামের মুখ্যমন্ত্রী, তিনি বিমলা প্রসাদ চালিহা। বিধানসভায় বিতর্কিত ভাষা বিল ১৯৬০ পাশ হওয়ার সময় বরাক উপত্যকার বিধায়কদের মধ্যে দুজন, মুখ্যমন্ত্রী চালিহা একজন আর অন্যজন এক বাঙালি বিধায়ক আব্দুল মতলিব মজুমদার সরকার পক্ষে ভোট দেয়। এরপরই আসামের সকল বঙ্গভাষী অঞ্চলকে নিয়ে এক পৃথক রাজ্য গঠনের আন্দোলন গড়ে তোলার প্রয়াসে বরাক ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার দলমত নিরপেক্ষ বাঙালি নেতাদের এক দুইদিবসীয় সম্মেলন হয় করিমগঞ্জ শহরে। কিন্তু বারবার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তীরে এসে তরী কূল পায় না, দানা বাঁধে না বাঙালির নিজস্ব ভূমির স্বপ্ন। ১৯৬১ র ১৫ই জানুয়ারি করিমগঞ্জে আর একটি অভিবর্তন হয় শীলভদ্র যাজির সভাপতিত্বে, অভিবর্তনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরাক উপত্যকাকে নিয়ে এক পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। এক কথায় পৃথক রাজ্যের ভাবনা চিন্তা হয় কিন্তু আবার দ্বিজাতিতত্ত্বের ভূত দর্শনে নেতারা এই প্রস্তাব কার্যকরী করতে উদ্যোগী হন না। এরপরও হাইলাকান্দি শহরে আর একটি অভিবর্তন হয়, তাতেও আসামের অনঅসমীয়া অঞ্চলগুলি নিয়ে পৃথক প্রশাসনিক বিভাগ তৈরির প্রস্তাব নেওয়া হয় এবং ঠিক হয় আসাম রাজ্যিক কাঠামোর ভিতর থাকতে হলে বাংলা ভাষার পূর্ণ স্বীকৃতি দিতে হবে। এক ডু কিংবা ডাই সংগ্রামের শপথে গঠন করা হয় গণসংগ্রাম পরিষদ কাছাড় জেলার তিন মহকুমা কাছাড় করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দিতে। গণসংগ্রাম পরিষদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে লোক গণনায় কারচুপির অভিযোগ জানিয়ে আসে। এবং সংবিধানের ৩৪৭ ধারায় রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাজভাষার স্বীকৃতি দাবী করে। সঙ্গে সঙ্গে বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি হিসেবে ১৩৬৮ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখে মানে ১৯৬১ র ১৫ই এপ্রিল সংকল্প