পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উনিশে মে: ভাষার সংকট □ ২৬

দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বরাক উপত্যকায়। এক অভিনব ও অভূতপূর্ব পদযাত্রার আয়োজন হয় মহকুমা শহরগুলি থেকে গ্রামে গ্রামে গণজাগরণের প্রস্তুতিতে। এর পরেও সরকারের তরফ থেকে কোনো সদর্থক প্রতিক্রিয়া পাওয়া না যাওয়ায় সর্বাত্মক হরতালের সিদ্ধান্ত হয় ম্যাট্রিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরদিন ১৯ শে মে থেকে। তারপর তো ইতিহাস। জেলা জুড়ে হরতাল পালিত হয় ভোর থেকেই, করিমগঞ্জ ও শিলচরে সত্যাগ্রহীরা কারাবরণ করেন। শিলচর স্টেশনে পুলিশের বন্দুক সত্যাগ্রহীরা ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার গুজব ছড়িয়ে গুলি বর্ষণ করা হয়, ঘটনা স্থলেই নয়জনের মৃতদেহ পাওয়া যায় পরদিন স্টেশন সংলগ্ন জলাধারে একজনের দেহ পাওয়া যায় আর হাসপাতালের একজনের মৃত্যু হয়। এক কিশোরী কমলা ভট্টাচার্য সহ শচীন্দ্রচন্দ্র পাল কানাইলাল নিয়োগী সুনীল সরকার সুকোমল পুরকায়স্থ কুমুদ দাস চণ্ডীচরণ সূত্রধর তরণী দেবনাথ হিতেশ বিশ্বাস বীরেন্দ্র সূত্রধর এবং সত্যেন্দ্র দেব শহিদদের মৃত্যুবরণ করেন। কার্ফর ভারি বুটের আস্ফালন অবজ্ঞা করে শিলচরের আপামর জনতা মহামিছিলে সমবেত হয়ে একাদশ শহিদকে সশ্রদ্ধ শেষ বিদায় জানায়, চিতাভস্ম মধুরা ঘাটে বিসর্জন দেওয়া হয়। শহিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক কালজয়ী সঙ্গীত রচনা করেন শ্যামাপদ ভট্টাচার্য,

“শোনো ডাকে একাদশ শহিদেরা ভাই
আর দেরি নয় দেরি দেরি নয়,
সুপ্তি ভেঙে পথে ছুটে আয়
হবে জয় হবে হবে জয়...'

 উনিশে মে গণহত্যার পর বরাক উপত্যকায় আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীকে শিলচর আসতে হয়, এবং একটি আপোষ রফায় আন্দোলন স্থগিত হয়, যে আপোষের নাম শাস্ত্রী ফর্মুলা। সংগ্রাম পরিদের দাবী ছিল গোটা আসাম রাজ্যের জন্য অসমিয়ার সঙ্গে বাংলা ভাষার সমান মর্যাদা, সেটা মানা হয় নি, বরাক উপত্যকার সরকারি কাজ কর্মে এবং শিক্ষায় বাংলার বিশেষ অধিকার স্বীকৃত হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে প্রতিশ্রুতিও ছিল যা রক্ষিত হয় নি আজও। যদিও এই অধিকার সুরক্ষিত রাখতে ১৯৭২ এবং ১৯৮৬ তে আরও তিনজন বাচ্চু চক্রবর্তী জগন ও যীশু শহিদ হন করিমগঞ্জ শহরে।

 ১৯শে মের ঐতিহ্য বহন করে উত্তর পূর্বের বাঙালি এখনও নিজের ক্রুশ নিজেই বহন করে চলেছে, কারণ সে জানে বিদ্ধ হওয়ার পর আছে পুনরুত্থান।

সৃষ্টির একুশ শতক মে ২০১৭।