পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ২৮

দেখলেই মন কেমন করে, ঘ্রাণ শুঁকলেই বাকি অর্দ্ধেকের জন্য রসনা আনচান করে। কুদ্দুস ভাই এর নামেই বোঝা যাচ্ছে খানদানি পাচক আর চারপাশের কশাইরাও তার একই বেরাদরির। কলকাতার নব্বুই শতাংশ পাঁঠা খাসির দোকানিই তো তারা। আমার জানা মতে দুটো মাত্র দোকানে সিঁদুরের ফোঁটা আছে, একটা কলেজ স্ট্রিটের বাঙালি পাঁঠা আর অন্যটি দমদমে একই সাইনবোর্ড। আর বাকি সবই হালাল কাটা, এই হালাল কাটাও তো গঙ্গাজল সাথে রান্না হয়, অন্যের ধর্মবিধি মেনে কাটা মাংস খেয়েও বেশ রক্ততিলক আঁকা যায়। তখন ঝটকা হালালের বিবাদ থাকে না। চারপেয়ে একটা কাটলে ধর্ম যায় না অন্যটার সাইজ বড়ো হলেই জাত গেল। আমার হরিণবাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যটা এখনও স্পষ্ট নয়। আসলে আমিও তো নই। কুদ্দুস ভাই এর কাবাবকথা অনেকের মুখেই শুনেছি, শুনে শুনে চেখে দেখার লোভ হয়নি বলতে পারি না। কিন্তু এখন আর তা হয় না, হচ্ছে না, আমি মন পাল্টে ফেলেছি, আমি হয়তো আর মাংসই খাব না। মাংসের প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে। তাহলে কি হিন্দুত্ববাদীদেরই জিতিয়ে দিলাম। নাকি প্রাণের ভয়, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধিরামাইয়া বিখ্যাত মানুষ তার প্রাণরক্ষা করার মানুষ আছে, আমার নেই, তাই। আখলাখের কেউ ছিল না। গুরুদেব কালবর্গি তাঁর বইপত্র-ঘেরা আশ্রমেই তো থাকতেন। না না পশ্চিমবাংলায় ওসব ভয় নেই, এখানে ভোটের ভয় শুধু। আর গোমাংস তো শুনেছি বিলেত যাওয়ার আগে, বিদেশ যাওয়ার আগে সবাই খাওয়া শিখে নেয়, স্টেক খাবে না কারি খাবে। না হলে যে উপোস দিয়ে ফিরতে হবে। বাংলাদেশ গিয়েও দেখেছি অন্য বিদেশেও দেখেছি। আরবদেশেও বড়ো বড়ো চারপেয়েরা সহজলভ্য আহার। খাদ্যাখাদ্য নিয়ে কে যে কখন ভাবতে শুরু করেছে, চিন দেশে শুনেছি এমন কোনো প্রাণী নেই কেঁচো কেন্নো মাকড়সা সাপ কাঁকড়া ভূত প্রেত সবই খায়, এক চৈনিক গাইড আমাকে বলেছিল চিনদেশের বৈদ্যরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক, কারণ তারা খায় না এমন জিনিসের কোনো তালিকা নেই। তাই ডাক্তাররা জানেন কী খেলে কী প্রতিক্রিয়া হয়, জানেন তার প্রশমনের উপায়ও। চিন জাপান বর্মা থাই এসব দেশ বৌদ্ধপ্রধান, বৌদ্ধরা তো জানি গরু শুয়োর দুটোই খায়, বুদ্ধদেব আবার হিন্দুদের দশাবতারের একজন। বৌদ্ধ ভুটিয়াদের আবিষ্কার শুয়োরের মাংসের পুর দেওয়া মোমো। বুদ্ধদেব কিংবা যিশুকে নিয়ে তেমন সমস্যা নেই সব গোল শুধু প্রিয় বন্ধু হজরত মহম্মদ শিষ্যদের নিয়ে, ঝুলির একমাত্র বেড়াল এবং এর জন্য গোরক্ষণ গোমাতা ইত্যাদি তত্ত্ব। গতকাল লেখক স্বপ্নময় এরকম একটা পোস্ট দিয়েছেন দেখলাম ফেসবুকে, গরু আমাদের মাতা, কাল থেকে ষাঁড় পিতা মহিষ জেঠা পাঁঠা কাকু। স্বপ্নময় লেখক মানুষ, রসসাহিত্যিক, লিখতেই পারেন। কিন্তু এবার বলি আমার নিরামিষাশী হওয়ার ইচ্ছেকারণ। একজন বামপন্থী নেতা যাঁকে বেশ সম্ভ্রমের চোখেই দেখা হয়, মহানাগরিকও ছিলেন, এমন কোনো আলপটকা কথাও বলেননি কোনোদিন। রোলমডেল হওয়ার একটা কিছু ছিল তাঁর মধ্যে, আর একজন সদ্য বাম টপকানো এক কবির একে অপরকে প্রকাশ্যে ক্যামেরা দেখিয়ে গোমাংস ভক্ষণের বীভৎসতা দেখে বিতৃষ্ণা এসে গেল। ক্ষুন্নিবৃত্তির দরকার না পড়লে হয়তো খাওয়াটাই ছেড়ে দিতাম। এসব কী হচ্ছে এ দেশে, কে একজন তো বলেই দিলেন এসব বীভৎস বীরত্ব কলকাতার ভোটবছরে না