পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ২৯

দেখিয়ে গুজরাট দিল্লিতে গিয়ে দেখালে বোঝা যেত কত টাকা কিলো নরমাংস। এই হল বাঙালির বুদ্ধিজীবন পশ্চিমবঙ্গের চল্লিশ ষাটের ভোট-রাজনীতিতে।

 বাউল সম্রাটের আপন দেশে ব্লগার হত্যা দিয়ে শুরু হয়েছিল। শাহবাগ আন্দোলন যে আশার আলো দেখিয়েছিল, ধর্মীয় মৌলবাদের কলঙ্ক তাকেও নিভিয়ে দিল এখন। যাদের হত্যা করা হল তাদের লেখালেখি যারা ছাপছেন তাদের হত্যা করার পরিকল্পনায় অভিনবত্ব কিছু নেই। পুরো প্রক্রিয়াটাই বাঙালিশূন্য বিশ্বায়নের এক সুচতুর প্রক্রিয়া। না হলে কেন এতদিন বাঙালি হত্যার প্রশিক্ষণ দিতে বাংলাদেশেই আলফাদের মূল ঘাঁটি ছিল! কেউ কেউ বলছেন ওসব অতীতকথা চুকেবুকে গেছে। শেখ হাসিনা ভুল শুধরে প্রত্যর্পণ করেছেন। আসলে আলফা-অস্ত্র ভোঁতা হতেই দুই রাষ্ট্রশক্তির ওদের প্রতি কৌতূহল কমে যায়। কারণ ততদিনে গোকুলে বেড়ে উঠেছে নতুন বধ্যাস্ত্র। আইনি শস্ত্র, নাম এনআরসি আর ডি ভোটার। জাতিবিদ্বেষের বীজ বিষগাছে বিকশিত হয়েছে এবং এখন তো ভোটরঙ্গের খেউড় জমানো আসরও জমজমাট। রাজনীতির কারবারিরা এখন সাঁড়াশি আক্রমণে বাঙালি-বধের আয়োজন সম্পূর্ণ করেছেন। বশংবদ প্রশাসন প্রস্তুত, বিচারব্যবস্থাও মদতদার হিসেবে সক্রিয়। আর বিধানব্যবস্থাও তথৈবচ, অর্থদপ্তরের থলি খুলে দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী সংসদীয় সচিব নামে, এই যখন সমস্ত রথী পরিবৃত বাঙালির অবস্থা, তার মুণ্ড গড়াগড়ি যাবে না তো কী হবে, ভাগা করে বিক্রি হবে নিদেনপক্ষে। এনআরসি নিয়ে যে কত রঙ্গ চলছে, একটার পর একটা হচ্ছে ছল, শেয়ালের কুমীরছানার মতো সবক'টাকে সাবাড় করে একটাকেই দেখিয়ে যাচ্ছে ডি ঢ্যাঁড়া মেরে। ডিটেনশন আর ডাউটফুল, ডি-শব্দে যে এত বিষ বাঙালি জানেনি। ঘাড়ধাক্কা বলে কোনো খেলা যে কোথাও নেই সে কথা ভালই জানে চক্রান্তকারীরা, পুশব্যাক হয় না। তাই নিরক্ষর চাষি বাঙালিকে ভয় দেখানোর দোকান খোলা হয়েছে। রাস্তাঘাট যেমন আছে থাকুক ব্রডগেজ থাকুক নাগরিক মানোন্নয়ন নিয়ে ভাবলে চলবে না, চুপ এনআরসি চলছে। খেলার মধ্যে আবার খেলা দেখানো হচ্ছে। বলছে, বাঙালি হিন্দু থাকবে, এনআরসি-তে নয়, নাগরিকত্ব থাকবে না, নামকাটা সেপাই হয়ে থাকুক। এসবের কী যে মানে সে যে জানে সেই জানে আর জানে হিংটিং ছট। তাহলে চাষবাসে রত মুসলমান বাঙালির কী হবে, তাদের দোষ কী। ওরাও তো নিরক্ষর, বংশবৃক্ষ দেখানোর মতো শিক্ষা থাকলে তো ওরা লণ্ডনি হয়ে যেত, বিদেশি তকমা থাকত না। একটা রাষ্ট্র কেন স্পষ্ট কথা বলতে পারছে না আটষট্টি বছরেও। যদি বিদেশিই হয়, তার মানে তাকে চিহ্নিত করা হয়েছে অন্য একটি দেশের নাগরিক হিসেবে, তাহলে সেই দেশে কেন তাকে সসম্মানে ফেরত পাঠানো হবে না। ডিটেনশন ক্যাম্পটা কী, ডি ভোটারের প্রহসন কেন। বিনা বিচারে বন্দী করে রেখে দেওয়ার বর্বরতা কেন। বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই পরিহাস মেনে নেব কেন।

 এবার একটা খবরে আসা যাক। পরিসংখ্যান বেরিয়েছে খবরের কাগজে। পশ্চিমবঙ্গে ষাটোর্ধ নাগরিক সংখ্যা সর্বাধিক। সারা দেশে এক নম্বরে। কত শতাংশ সে বিচার্য নয়। কেউ কেউ বলছেন পশ্চিমবাংলা শুধু প্রমোদতরণী নয় একটি বৃদ্ধাশ্রমও বটে হা হা।