পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৩০

এ বড়ো সুখের সময় নয় বলে পরিহাস মুখর হওয়ার কথা নয়। কেন হল এই অবস্থা, একটা ভারসাম্য তো থাকবে। তার মানে পশ্চিমবঙ্গে যৌবনের কোনো ঠাঁই নেই বলে এই হাল। চাকরি নেই ব্যবসা বাণিজ্য নেই সিণ্ডিকেট আর প্রমোটারি ছাড়া, সারদা চুরিও তো বন্ধ। শোনা যাচ্ছে রাজ্য জুড়ে নতুন চিটিং শুরু হয়েছে খুনোখুনিও হচ্ছে। সেসব ভিন্ন কথা। বাঙালি যৌবন কি তবে আরবে যাচ্ছে, লণ্ডন আনা গেল না বলে লণ্ডন যাচ্ছে। দক্ষিণ ভারতের মলে মলে ওদের দেখা যায়। খাবারের দোকানে রাঁধুনি টেবল বয়-দারোয়ান নির্মাণশ্রমিক ওসব দেশে সব বাঙালি। সব সস্তার শ্রমিক এরা। হট্ট মন্দিরে শোয় দিনে দশ-কুড়ি টাকার টপআপে কথা বলে মা-বাবা বউ প্রেমিকার সঙ্গে। আর বাবুরাও আছেন আইটির সস্তা শ্রমিকরা মলমদ্য করে বাড়িঘর মনে করতেই পারে না। এ শুধু পশ্চিমবাংলা নয়, সোনাই সোনাবাড়িঘাটেরও গল্প। বরাক উপত্যকার পরিসংখ্যান এক। বাঙালির বাচ্চারা যদি হঠাৎ করে সব দেশে ফিরতে শুরু করে তাহলে তো বৃদ্ধাশ্রম উঠে যাবে, পরিসংখ্যান পাল্টাবে। প্রশ্ন কিন্তু তাও নয়। এই যারা এখন চেন্নাই কর্ণাটক অন্ধ্র মহারাষ্ট্রে থাকতে গেছে তারা কে, কী তাদের পরিচয়। আসাম থেকে বরাক থেকে উত্তর-পূর্ব থেকে যারা গেছে তাদের নাম কি থাকবে কুচক্রীদের দিল্লিকা লাড্ডু এনআরসি তে। ওরা যদি ফিরে আসে তাহলে কি ওরা আবার নতুন করে রাষ্ট্রহীন হয়ে যাবে।

 এসব কি অতিভাবনা। যুক্তি তো বলে ইতিহাস বলে অতিকথা বলে, ভূগোল ভাঙে বারবার, নতুন করে গড়ে। ইহুদিকে এখন আর কেউ ইহুদি বলে না। ওদেরও রাষ্ট্র আছে। এক্সোডাস থেকে অমিয়ভূষণ আমরা শুনেছি প্রব্রজনের গল্প। বাঙালিও কি তাহলে পাবে তার রাষ্ট্র এই ভারতে। দলিত বাঙালি বলে কেউ কেউ একটা খণ্ড করেছেন বাঙালির, বাঙালি মানেই তো দলিত। ওরা আছেন কর্নাটকে মহারাষ্ট্রে দণ্ডকবনে ঝাড়খণ্ডে বিহারে, ওরা প্রতিস্থাপিত হয়েছেন নেহরু স্যারের সৌজন্যে, বাংলা নায়কদেরই বা বাদ দেব কেন। ওরা পারতেন না একখণ্ড ভূমিতে স্থাপিত করতে তাদের পাপে বিতাড়িত বাঙালিকে। যাই হোক যারা আন্দামান টান্দামানে গেলেন তাদের সবাইকে কি নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে। হয়নি, থাকতে দেওয়া হয়েছে শুধু। হলোকাস্টের জন্য বাঙালিকে কাঁঠাল পাতা খাইয়ে রেখে দেওয়া হয়েছে। আর এখন ভান হচ্ছে যেন ঘুম ভেঙেছে, নবীন এই ধর্মীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার উলঙ্গ রাজা বেহালা বাজাচ্ছেন এরোপ্লেনে আর বাঙালির দহনকাণ্ডের নীলনক্সা সাজাচ্ছেন।

 পশ্চিমবাংলায় মহম্মদ বিন তুঘলক পূর্বাশ্রমের কালিদাস হয়ে রাষ্ট্রব্যবস্থার ডাল কাটছেন মুচকি হাসিতে, খেয়াল থাকলেও ভাবছেন শেষ কোপ তো মারিনি, তখন নেমে চলে যাব অন্য ডালে। লণ্ডনেই চলে যাব। কিন্তু বরাক উপত্যকার বাঙালির, উত্তর-পূর্বের বাঙালির অন্য অপশন নেই, তাকে জোট বাঁধতেই হবে। গোমাংসের রাজনীতি যেমন বর্জন করেছে উত্তরপূর্বদেশ তেমনি এনআরসি প্রহসনকেও প্রতিরোধ করবে বাঙালির যৌথ নেতৃত্ব। আর প্রতিরোধের জন্যও চাই স্বপ্ন সঞ্চয়, বাউলের গানকে সম্পদ করেই এগোতে হবে। আগের সুন্দর দিন ফিরিয়ে আনতে হবে।

 দ্বিরালাপ ৭১। অক্টোবর ২০১৫