পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বরাক উপত্যকার বাঙালি

বরাক উপত্যকার বাঙালি তথা উত্তর পূর্বাঞ্চলের বাঙালির সংকটের সঙ্গে জুড়ে যাচ্ছে আমার ব্যক্তিগত অসহায়তা। বছর পঁচিশেক হয় বরাক উপত্যকা থেকে নিরাপদদূরত্বের কলকাতায় আছি, তাও মনটা পড়ে থাকে শিলচর হাইলাকান্দি লক্ষ্মীপুর সোনাই করিমগঞ্জ শশীনগর কর্ণমধুতে। দশ বছরের অবসর জীবনে ভেবেই যাচ্ছি বরাক নদীর পারে কোথাও একটা বাড়ি করে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দেব মাতৃভাষায় কথা বলে চেনাপদের ডালভাত পালই শাক রসা কড়ু মাছের ঝোল খেয়ে, কিন্তু হয়ে ওঠেনা, ফেরা হয় না শেকড়ে। কিছুটা নিজের কাছ থেকেই বাঁধা পাই, কিছুটা পাই রাষ্ট্রের চোখরাঙানি। কোথায় যাব, কোথায় থাকব, একটুকরো জমি তো আমায় কিনতে দেবে না আমারজন্মভূমিতে। আমি কিন্তু উদ্বাস্তু নই স্বাধীনতার দুবছর পর জন্ম হলেও আমার প্রপিতামহ সাবেক করিমগঞ্জ মহকুমার বাসিন্দা ছিলেন। আমার এক অসমীয়া আত্মীয় গৌহাটির মস্তবড় ডাক্তার, বেড়াতে এসে বলে গেল,

 —এনআরসিতে নামটা উঠিয়ে নাও মেশো, লিগ্যাসি ডাটা পাও কিনা দেখ।

 বললাম,

 —দেখি। কিন্তু কী হবে?

 বলল,

 —তুমি তো ফিরতে চাও আসামে।

 দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটু চেষ্টা চালাই, দেওয়ান বাগানের সুব্রতা ভোটার লিস্ট লিগ্যাসিডাটা কোড সহ পাঠিয়ে দেয়। একটা দিন যে কী আনন্দে কাটে বাবার নাম, মায়ের নাম,দাদার নাম ভোটার লিস্টে দেখে, যেন রাজ্য জয় করে ফেলেছি। তারপর বুঝেছি ওইকোড দিয়ে কী হবে। আমি তো থাকি না ওদেশে, আমার ঠিকানা নেই। তাই আবার মন বিষাদগ্রস্ত। এ কেমন দেশ কেমন রাষ্ট্র,যেখানে আমি জন্মেও পরবাসী। ভয়ও হয় সন্তানের জন্য ওদের জন্ম তো আসামে, যদি পশ্চিমবঙ্গ ওদের অস্বীকার করে, চাকরি করছে কর্ণাটকে,ওরাও যদি বলে, দেব গলাধাক্কা। এই সঙ্কট কি শুধু বরাকউপত্যকার বাংলা ও বাঙালির নাকি উত্তর পূর্ব ভারতের বাংলা ও বাঙালির না কি ভারত রাষ্ট্রের বাংলা ও বাঙালির। এরকম দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা অন্য কোনো ভাষাভাষী মানবজাতির কি আছে এই পোড়া দেশে। মারী মন্বন্তর নিয়ে সুখেই তো ছিল বাঙালি দেশভাগের আগে, কিন্তু রাজনীতির ধর্মনীতির ভাষানীতির মঙ্গল কাটাকাটি উচ্ছন্নে নিয়ে গেল ভারত ভাগের বাঙালিকে। যে কোনো দশাপ্রাপ্তির এক একটা আঞ্চলিক কারণ থাকে, আত্মঘাতী জাতির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় অংশে আত্মহত্যার সঙ্গে যোগ হয়েছে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে। যে রাষ্ট্র