পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৩২

ব্যবস্থা নিরঙ্কুশ হতে গিয়ে চেয়েছিল যা, তা পারে নি বলে আক্রোশে দফায় দফায় চক্রান্ত করে বাঙালি শূন্য করতে চাইছে আসাম। এবং সামিল হয়েছে সবকটি সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল এবং আঞ্চলিক দলগুলিও পরোক্ষে তাদের মদতপুষ্ট। কিছু বাংলা সংবাদপত্র ও সাময়িক পত্র পর্যন্ত তাদের লুকনো অভিসন্ধিতে সবকিছুর অসমিয়াকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের সঙ্গে কিছু তথাকথিত সাহিত্যপত্র সামিল হয়ে সুখে পাশ ফিরে শুয়ে থাকছে আত্মহননেচ্ছু। হয়তো এসব কথা প্রমাণ ছাড়া বলার কোনো মানে হয় না, কিন্তু এটা তো সত্যি কথা যদি প্রমাণই থাকবে তাহলে আর চক্রান্ত কেন। আসলে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালির সংকটের নমুনা ভিন্ন, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালি বুদ্ধিজীবীরা মূলত শিক্ষক এবং চাকুরীজীবী। তাই তারা বাধ্যতামূলকভাবে আত্মরক্ষায় আত্মঘাতী। আর এদিকে, বরাক উপত্যকার উপনিবেশকে শোষণের পাঠশালা বানিয়ে মিড-ডে মিলের নামে ব্রডগেজ আর মহাসড়কের ললিপপ দেখাচ্ছে। সর্দার পড়োর দল কখনো গামছা গলায় দিয়ে ভোটবাক্স কব্জা করে ফেলছেন, কখনো আবার বিহু নাচ আর সত্রিয়া নাচের আসর বসিয়ে ঘোষণা করছেন ধামাইল বরাকের জাতীয় নৃত্য, ধামাইলকে যেন শংসাপত্র না দিলে ধামাইল হচ্ছিল না। এদিকে ডিটেনশন ক্যাম্প নামের এক পশুখামারে যখন যাকে ইচ্ছে ধরছে ‘ডি' দাগছে আর পুরছে। ডি মানে ডাউটফুল কিংবা ডুবিয়াস ভোটার। ঠাকুরদাদা জল ঘোলা করার কেস বদলে এখন ঠাকুরদাদার লিগ্যাসি ডাটার সোনার হরিণ ধরার ব্যবসা হচ্ছে রমরমা। পাশ আর কেউ বলে না, সবাই বলে হযবরল, বলে ফেল ফেল ফেল। এই সেদিন দন্ত্য স দিয়ে নাম হওয়ার অপরাধে এক ভদ্রমহিলা ঢুকে গেলেন খোঁয়াড়ে। অন্য এক মহিলার পিতৃভূমি ভারতবর্ষের অন্য রাজ্য হওয়ায় নাগরিক পঞ্জিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে গেলেন। এই একজন কিন্তু একজন নয়, শহর উজাড় করা। নেহেরু জিন্না আলি প্যাটেলরা কিন্তু অন্য কথা বলেছিলেন, বেশ মিষ্টি করে ক্ষমতা দখল করেছিলেন। এসব তো গেল প্রশাসনিক সন্ত্রাস, যা একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া, থেমে থাকে না, চলে। সামাজিক সন্ত্রাস তো আরও মারাত্মক, জানান দিয়ে আসে না, ক্যানসার ডিটেকশনের মতো নিদান হয়। রফতানি বাণিজ্যের মতো, পাঠিয়ে দেওয়া হয়। যখনই দেখা যায় জাতিগত প্রশ্নে ভাষার প্রশ্নে বরাক উপত্যকায় বাঙালির সমবায় কার্যকরী শক্তি হিসেবে প্রতিরোধে দাঁড়িয়ে গেছে, তখনই আমদানির বিভেদ দিয়ে অন্ধ করে দেওয়া হয় দুচোখের দৃষ্টি। শুভবুদ্ধি সক্রিয় থাকায় চিকিৎসা প্রক্রিয়া ছাড়াই ঝাপসা দুচোখ পরিষ্কার হয়ে যায়, হিন্দু মুসলমান এক থাকে। এর উপর আছে রাজনীতির ওঠাপড়া, যোগ বিয়োগ, সাধারণ ভোটদাতাকে বিভ্রান্ত করতে একজন বলে গেলেন চলছে না অন্যজন বললেন চলবে না। বিভ্রান্ত বাঙালি বুঝতেই পারে না চলছে না চলবে না-য়ে নতুনত্ব কী। এই তো কিছুদিন আগেই একজন মুখ্যমন্ত্রী পদলোভী বলে দিলেন এই নাগরিক পঞ্জি কি আসামের নাগরিক পঞ্জি। গদগদ হয়ে ভুক্তভোগী বললেন কেমন বিশ্বপ্রেমের রাজনীতি। তিনি আজ আর একধাপ এগিয়ে গিয়ে বললেন সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। ভোটের ঢাকে কাঠি পড়ল বলে। এবার কী একটু সাহিত্যের সন্ত্রাস না করলেই নয়।