পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
উনিশে মে : ভাষার সংকট ৩৩

বুদ্ধিজীবীদের মগজ ধোলাই করতে এখানে ফি বছর কার্নিভ্যাল জমে ওঠে, কলকাতা থেকে নামী সাহিত্যিক আসেন তারা সব বানীময়। তারাও আসেন যেন দিল্লিশ্বরের মতো জগদীশ্বর। বিনোদনে চটকে দিয়ে চলে যান। একবার কেউ প্রশ্নও করেন না আপনারা কেমন আছেন। তবে কলকাতার বাজারেও এখন দুর্দিন, সাহিত্যে কোনো উত্তমকুমার নেই, সেই শীর্ষেন্দু ছাড়া। আবার ভোটে এমপি দেব এমপি শতাব্দী এমপি মুনমুন আবার আসবেন হয়তো। নতুন করে আসবেন মিমি নুসরত। যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম এসব কথা কী সব তালগোল পাকানো নয়। কোনো মাথামুণ্ডু নেই। কী লিখব কী বলব। মনের কথা কেন বলব, কেউ কী বলে আজকাল। এরকম দোলাচলের সময় একজনই এসে আমাদের পথরুধে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার কথাই মনে পড়ে, তার গান গুনগুনিয়ে উস্কানি দেয়। অসহায়ের সহায় হয়। জানি না কেন তার এই গানটি এই মুহূর্তে বড় প্রয়োজনীয় মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে মনের কথা, নাই কথার কথা।

ওলো সই ওলো সই
আমারও ইচ্ছে করে তোদের মতো মনের কথা কই।
ছড়িয়ে দিয়ে পা দুখানি কোণে বসে কানাকানি
কভু হেসে কভু কেঁদে চেয়ে বসে রই,
ওলো সই ওলো সই,
তোদের আছে মনের কথা, আমার আছে কই
আমি কী বলিব কার কথা কোন সুখ কোন ব্যথা—
নাই কথা, তবু সাধ শতকথা কই।

 কী বলিব বলে থেমে থাকায় বুদ্ধি আছে, কারণ মনের কথা বলার অনেক নিষেধ আছে, উত্তর-পূর্বের বাঙালি সোজা কথা বলতে পারে না। এদিকে বললে ওদিক উদলা হয়ে যাবে। এখন এদেশের বাঙালি সমঝোতা কথায় করে খায়। মায়ের ভাষায় কথা বলায় প্রতিবন্ধকতা আছে যে। তবু বলতে হয়, কিছু কিছু কথা না বললে তো ইতিহবাস মার্জনা করবে না, প্রজন্মও ছেড়ে কথা কইবে না। আমরা যে এত যন্ত্রণা সয়েও আসামনামক রাজ্যের লেজুড় হয়ে কেন আছি সে ইতিহাসের অনৃত কথা নয় উচ্চারণ করলাম না। কিন্তু আইনের শাসন কেন পাবে না নাগরিক বাঙালি। আসলে আসাম নামক রাজ্যে নেতার উদয় হয় জনজীবন সমৃদ্ধ করতে নয়, বাঙালির ডানা ছাঁটতে তারা ব্রিটিশদেরবিষের তিরে শান দেয় আর মহারথী হয়ে ওঠে। তারা হয়ে ওঠে লোকপ্রিয়, হয়ে ওঠে অম্বিকাগিরি বিমলাপ্রসাদ বিষ্ণুরাম সিদ্ধেশ্বর, তারাই ছাত্র নেতা দুলাল, গোরেশ্বরের মহানায়ক। তারপর তো শিশুনায়ক প্রধানমন্ত্রী, ছাত্র মন্ত্রীসভা। এসব কী রাজধর্ম। নায়কোত্তম ছাত্রনেতা উচ্চতম আদালতে আসামের অসমিয়া বিচারপতির রায়ে বিজয়ী হওয়ায় খুলে যায় বিদ্বেষের মহাকোষ। গণতন্ত্রের স্তম্ভ দখল করে করে এগোতে থাকে রাজার হস্ত। তিনি এখন রাজ্যপ্রধান। আসাম নাগরিক পঞ্জি নবায়নের চক্রান্তে গণতন্ত্রের মুখটাও অপসারিত। এক দুই তিন চার সবকটি স্তম্ভই এখন বাঙালির বিপক্ষে। তাই মনের কথা কওয়ার, ভাষার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধাচারণ করার ক্ষমতা