পাতা:উনিশে মে- ভাষার সংকট - রণবীর পুরকায়স্থ (২০২১).pdf/৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

উনিশে মে : ভাষার সংকট □ ৩৬

স্বাধীনতার পর পূর্বতন সুরমা উপত্যকার প্রধান শহর শিলচরের পথেঘাটে নাগরিক সুযোগ সুবিধা বলে কিছুই থাকল না, তুলনামূলক বিচারে সিলেটের সদর সিলেট শহরের উন্নয়ন হল চোখে পড়ার মতো, আন্তর্জাতিক মানের শহর হয়ে উঠেছে এখন। বরাক উপত্যকার দুর্ভাগ্য বর্তমান সময়ে একজন পথপ্রদর্শক নেতার দেখা পাওয়া গেল না গোটা উপত্যকায়। এমন একজন সাহসী নেতা নেই যে পিআরসি আর এনাআরসির নামে ডি ভোটারের নামে আতঙ্কিত উপত্যকাবাসীকে বরাভয় দিয়ে নেতৃত্ব দেবেন। বাংলা ভাষার শহিদের পূণ্যভূমি বরাক উপত্যকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি জনজাগরণের আন্দোলন করেছিল একসময়। আকসার নেতৃত্বে সেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় কেন বৌদ্ধিক নেতৃত্ব দিতে পারছে না এই সংকটের সময়। আসলে সবই এক প্রক্রিয়া, চক্রান্তের পরিকল্পনা, খাদের কিনারায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ধীরে ধীরে, বিষ দেওয়া হচ্ছে ধীরে ধীরে। বলা হচ্ছে ১৯৫১-র ভোটার লিস্টে পূর্বপুরুষের নাম থাকতে হবে ১৯৭১-এর ২৪ মার্চের মধ্যরাত পর্যন্ত থাকতে হবে নাম, তবেই ভারতীয়ত্বের উত্তরাধিকার, লিগ্যাসি। তাই যুব সমাজ প্রাণপণ খুঁজছে উত্তরাধিকার উপাত্ত। খুঁজে পেতে পেয়ে গেলেই ব্যক্তিগত জয় নিয়ে চলে যাচ্ছে সুখের গৃহকোণে। স্বার্থপর প্রজাতি তৈরির এও এক প্রকল্প।

 বরাক উপত্যকার নবীন গল্পকার মেঘমালা দে একটি গল্প লিখেছেন মোক্ষম এই বিষয়ে, সমাজ শাসনের যার যেমন হাতিয়ার। আরও অনেকের দক্ষ কলমও প্রস্তুত হচ্ছে প্রতিরোধে। তাহলে আর কেন অভিযোগ। দেশের সুরক্ষা কী শুধু মিলিটারি দিয়ে হয়, সেনাবাহিনি তো একটি বাহিনী, পদাতিক। নৌবাহিনীও আছে। আছে বিমানবহর। তাই ভাষা রক্ষার দায় শুধু রাজনৈতিক নেতার নয়, শুধু প্রশাসকের নয়, শুধু বিচার ব্যবস্থার নয় শুধু সংবাদমাধ্যমের নয়। আছে অন্য একটি স্তম্ভও, পঞ্চম স্তম্ভ, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রহরা। সুখের কথা বরাক উপত্যকায় বুদ্ধিজীবী সমাজের নতুন প্রজন্ম এখন প্রস্তুত। বরাকের বাঙালির প্রাণ এত ঠুনকো নয়, ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার বাঙালিরও দেয়ালে ঠেকে গেছে পিঠ তারাও প্রস্তুত হচ্ছেন প্রতিরোধে। ভারত বহির্ভূত এনআরসি, পিআরসি-র ভয় আর ডিটেনশন ক্যাম্পের নির্যাতন দিয়ে তাড়ানো যাবে না বাঙালি। এই সার্বভৌম দেশের ভূমিপুত্র প্রতিটি নাগরিক এদেশেই থাকবে, কোনো পুশব্যাকে যাবে না, ভুয়ো ডিটেনশনেও যাবে না।

 আমার এখন খুব ইচ্ছে সবার নাম সব লেখাকর্মী, সাংস্কৃতিক কর্মীর নাম লিখে জানিয়ে দিই আপনারা সবাই মিলিত হোন, গান্ধিবাগে একটি সম্মেলন হোক, বিরোধীশূন্য হোক সাহিত্য সংস্কৃতির অঙ্গন। বরাক উপত্যকার তথা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার সমস্ত লেখাকর্মীদের আমি চিনি ব্যক্তিগত ভাবে, সংস্কৃতিকর্মীদেরও চিনি, যোগাযোগ করতে পারি অনুরোধ জানাতে পারি। আমার প্রিয় বরাক ভূমির সৃষ্টিশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি কর্মী যে যেখানেই আছি একসাথে এক নবীন এবং অভিনব আন্দোলন গড়ে তুলতেই পারি কোনো বাধ্যবাধকতা ছাড়া। যার যেমন অস্ত্র, আমাদের অস্ত্রেই আমরা আঘাত করব। আমাদের তো কারো সঙ্গে অকারণ বিরোধ নেই, তাই মাননীয় চারটি স্তম্ভের সহযোগী হয়েই কেন এগোব না আমরা পাঁচ। পঞ্চম।